বিশ্ব বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি উৎসব ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা
বর্তমান | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, হলদিয়া: সাহিত্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনেই উন্নত সমাজ গড়ে ওঠে। উন্নত সমাজের জন্য নিয়মিত জ্ঞান চর্চা দরকার। চর্চা এবং তর্কবিতর্ক ছাড়া সত্যের অনুসন্ধান করা যায় না। শুক্রবার হলদিয়ায় ২১তম বিশ্ব বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি উৎসবের উদ্বোধন করে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর বার্তা দেন লক্ষ্মণ শেঠ। তিনি বলেন, আমাদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে সাহিত্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন জরুরি। এদিন বর্ণময় আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনের সাহিত্যের মহাযজ্ঞ। হলদি ও হুগলি নদীর মোহনায় রাজ্য, দেশ ও বিদেশের বাংলার ভাষার কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদের ‘মহাকুম্ভে’ পরিণত হয়েছে সাহিত্য উৎসব।
এদিন উদ্বোধনী মঞ্চের মূল আকর্ষণ ছিলেন কিংবদন্তী অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। সাতাশি বছর বয়সেও তাঁর সাবলীল ও সরস বক্তব্য কবি, সাহিত্যিক ও দর্শকদের মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ছোটবেলায় সাহিত্যের বই পড়তে পড়তে সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। হঠাৎ একদিন বাবার বকুনি খেয়ে গল্পের বই পড়া ছাড়তে বাধ্য হই। পরে কোনও এক জায়গায় এক নেতার বক্তব্য শুনে মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম যদি নেত্রী হই, তাহলে অনেকের উপকার করতে পারব। বাড়িতে ফিরে কলের গানের চোঙা নিয়ে ফুঁকতে শুরু করি। এই করতে গিয়ে বাবার থাপ্পড় খেতে হয়। শেষে নেত্রী হতে গিয়ে অভিনেত্রী হয়ে গিয়েছি। অভিনেত্রী হয়ে বহু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। অন্ধকার রাতে হাঁটতে হাঁটতে এমন একটা মঞ্চে এসে পৌঁছেছি, যা ইট কাঠ মার্বেল পাথরে নয়, ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা দিয়ে তৈরি। সাবিত্রী তাঁর জীবনের কথাগুলি এমন গল্পের ছলে বলেন, সবাই হাততালি দিতেও ভুলে যান কয়েক মুহূর্তের জন্য।
এদিন বটের চারায় জলসিঞ্চন করে উৎসবের উদ্বোধন হয়। এরপরই কবি আপনজন পত্রিকার সম্পাদক ও উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত কবি তমালিকা পণ্ডাশেঠ নামাঙ্কিত স্পেশাল ইন্ডিয়ান পোস্টাল কভার প্রকাশ করা হয়। ভারতীয় ডাক বিভাগের দক্ষিণবঙ্গের পোস্টমাস্টার জেনারেল ঋজু গঙ্গোপাধ্যায় উদ্বোধক লক্ষ্মণ শেঠ, অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় সহ উপস্থিত কবি সাহিত্যিকদের হাতে সেই পোস্টাল কভার তুলে দেন। উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন সাঁতারু বুলা চৌধুরী, সাহিত্যিক অমর মিত্র, রামকুমার মুখোপাধ্যায়, মানসী দে শেঠ, আইকেয়ারের সম্পাদক আশিস লাহিড়ি, আপনজনের প্রকাশক সায়ন্তন শেঠ, সম্পাদক সুদীপ্তন শেঠ, আইকেয়ার কালচারারাল অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান স্পর্শিতা পণ্ডাশেঠ।
উদ্বোধনের সময় একই সঙ্গে বেহালার সুরমূর্ছনার সঙ্গে ক্যানভাসে ছবি আঁকেন শিল্পী রামকুমার মান্না। তিনি এদিন উৎসবের মনোজ মিত্র চিত্র কর্মশালারও উদ্বোধন করেন। ৩০জন শিল্পী একসঙ্গে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন কবিতার নানা অনুষঙ্গ এবং সাম্প্রতিক বিষয়। রামকুমার মান্না নিজে সেই কর্মশালায় টেরাকোটার নৈস্বর্গিক পাখি তৈরি করে চমকে দেন। উৎসবে রাজ্যের বাইরে থেকে লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে এসেছেন কবিরা। এদিন বিকেলে রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী’র প্রেম নিয়ে আলোচনায় মাত করে দেন সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।