নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: গুড়াপের পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত প্রতিবেশী অশোক সিং’কে ফাঁসির সাজা দিল চুঁচুড়া আদালত। গত ১৫ জানুয়ারি পকসো আদালতের বিচারক চন্দ্রপ্রভা চক্রবর্তী গুড়াপের ঘটনায় অভিযুক্ত বছর বিয়াল্লিশের অশোককে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। শুক্রবার তিনি সাজা ঘোষণা করেন। অশোক সিং’কে তিনি ফাঁসির সাজা দিয়েছেন। পাশাপাশি ১০ লক্ষ জরিমানাও করেছেন। গত ২৪ নভেম্বর হুগলির ধনেখালির গুড়াপে ওই পৈশাচিক ঘটনাটি ঘটেছিল। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে ঘটনার ৫৫ দিনের মাথায় ফাঁসির সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নানা মহলে সাড়া পড়ে গিয়েছে। সাজা ঘোষণার পরেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী সমাজমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বিচারব্যবস্থা ও রাজ্য পুলিসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
৫৪ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি মৃত শিশুর পরিবারের প্রতি সহানুভূতিও ব্যক্ত করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘ধর্ষকদের কোনও স্থান আমাদের পৃথিবীতে হবে না। আমরা সকলে মিলে আমাদের শিশুদের জন্য এই পৃথিবীকে নিরাপদ করব। তার জন্য কঠোর আইন, কড়া প্রশাসন ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশের পথ আমাদের ধরতে হবে।’ ৫৫ দিনে ফাঁসির সাজা ঘোষণায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া—‘অন্যরা যখন নারী সুরক্ষায় ফাঁকা বুলি আওড়ায়, তখন বাংলা মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখায়। এহেন কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত ন্যায়বিচার এবং শাস্তি বাংলার পদক্ষেপ দৃষ্টান্তমূলকই হয়। হুগলি (গ্রামীণ) পুলিসকে অভিনন্দন জানাই।’
সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম এত দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে ফাঁসির মতো দৃষ্টান্তমূলক সাজা ঘোষণা হল। আমি আগেই বলেছিলাম, যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে, তাতে ফাঁসির সাজার জন্যই আমরা সওয়াল করব। সেই সিদ্ধান্তে আমরা অটল ছিলাম। বিচারকও সেই যুক্তিতর্ক মেনেছেন। এই বিচার এবং তার শাস্তি, সমাজের জন্য একটি বিশেষ বার্তা বহন করছে। ধর্ষণ ও খুন হওয়া শিশুর বাবার চোখ এদিন ছিল জলে ভরা। কাঁদতে কাঁদতেই বলছিলেন, নরপিশাচের জন্য ফাঁসিই ছিল উপযুক্ত শাস্তি। আমার ছোট্ট মেয়েটার আত্মা আজ শান্তি পাবে। তাঁর আইনজীবী মৃণ্ময় মজুমদার বলেন, বেনজির রায় হয়েছে। আমরা খুশি। গত ২৪ নভেম্বর রাতে প্রতিবেশীর পাঁচ বছরের শিশুকে লজেন্স দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল অশোক সিং। অনেক রাতে শিশুটির পরিবার অশোকের বাড়িতে খানাতল্লাশিতে যায়। সেখানেই অর্ধনগ্ন, রক্তাক্ত অবস্থায় পাঁচ বছরের শিশুটির বস্তা চাপা দেওয়া মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা অশোককে ব্যাপক গণপিটুনি দেয়। রাতেই পুলিস এসে তাকে গ্রেপ্তার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এরপর দ্রুত সিট গঠন করে তদন্ত নামে পুলিস। ৯ ডিসেম্বর তারা চার্জশিটও দিয়ে দেয়। সেই মামলায় শেষ পর্যন্ত বিচারক ফাঁসির সাজা ঘোষণা করলেন। প্রসঙ্গত, এক যুবককে অপহরণ ও খুনের মামলায় চুঁচুড়া আদালতে সম্প্রতি একসঙ্গে সাত জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল।