• ওটিতে অ্যাবসেন্ট: ডাক্তাররা কি পাশে পাবেন সংগঠনকে? ধন্দ জারি
    এই সময় | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গোড়াতেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল যে, মেদিনীপুর মেডিক্যালে মর্মান্তিক ঘটনার দিন রাতে কিছু ডাক্তার ডিউটিতে অনুপস্থিত ছিলেন। এই তথ্য পাওয়ার পরেই সিআইডি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন। পুলিশ সূত্রে খবর, যে যে ডাক্তাররা অনুপস্থিতির স্ক্যানারে ছিলেন, তাঁদের ওই রাতের মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ট্রেস করা হয় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় হানা দিয়ে সিআইডি নিশ্চিতও হয়, ওই চিকিৎসকরা ডিউটির সময়ে বেশ কিছু নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালে অন্যায্য ভাবে উপস্থিত ছিলেন।

    এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর চিকিৎসকদের একাংশ আবার মনে করছেন, কর্তব্যে অবহেলায় অভিযুক্ত ওই চিকিৎসকদের পাশে সাংগঠনিক ভাবে দাঁড়ানো উচিত হবে কি না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।

    স্বাস্থ্যভবনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, কর্তব্যে গাফিলতির এমন অকাট্য প্রমাণ সিআইডি–র হাতে আছে বলেই সরকার এমন বেনজির ভাবে এতজন ডাক্তারকে সরাসরি সাসপেন্ড করার পথে হাঁটার সাহস দেখিয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (আরএল) নিয়ে অভিযোগ উঠেছে ঠিকই। সে জন্য সেগুলি পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। রিপোর্ট এলে তবেই সেগুলির গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

    কিন্তু সিনিয়র যে সব চিকিৎসকের সে দিন মেদিনীপুর মেডিক্যালের ওটি–তে, নিদেনপক্ষে হাসপাতালের ক্যাম্পাসে থাকার কথা ছিল, তাঁরা তো সেখানে ছিলেন না। আরএল ভালো হোক বা খারাপ, ওই সিনিয়র ডাক্তাররা উপস্থিত থাকলে যে জুনিয়রদের তুলনায় জটিল হয়ে যাওয়া পরিস্থিতি অনেক ভালো ভাবে সামলাতে পারতেন, তা নিয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই। হতে পারে, এত বড় বিপর্যয় হয়তো হতোই না!’

    আর এখানেই সরকার জোর পেয়ে গিয়েছে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার। আবার ঠিক একই কারণে সমর্থনের প্রশ্নে কিছুটা সংশয়ী কোনও কোনও চিকিৎসক সংগঠন। তারা জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে জোর গলায় প্রতিবাদ করছে ঠিকই। কিন্তু গরহাজিরায় অভিযুক্ত সিনিয়র ডাক্তারদের হয়ে কিছু বলতে দশবার ভাবছে। একটি অরাজনৈতিক চিকিৎসক সংগঠনের এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার কথায়, ‘সত্যিই যদি দেখা যায়, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ডিউটি বাদ দিয়ে একজন সরকারি চিকিৎসক নার্সিংহোম কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে সেই সময়ে রোগী দেখছেন, সিজ়ার বা অ্যানাস্থেশিয়া করছেন, তা হলে কোন মুখে তাঁদের পাশে দাঁড়াব! কর্তব্যে অবহেলা প্রমাণিত হলে তো আর এমন অনৈতিক কাজের জন্য তাঁকে সমর্থন করা যায় না।’

    যদিও শুক্রবারও সিনিয়র–জুনিয়র ডাক্তারদের একটা বড় অংশ বারংবার বলে চলেছেন, অভিযুক্ত আরএলের দোষ ঢাকতেই ডাক্তারদের কাঠগড়ায় তুলছে সরকার। স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য অন্য যুক্তি দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, অভিযুক্ত ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’–এর তিনটি ব্যাচের আরএল সম্প্রতি ব্যবহৃত হচ্ছিল। এর মধ্যে র‍্যান্ডম স্যাম্পলিংয়ে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে মুম্বইয়ের এনএবিএল (ন্যাশনাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর ল্যাবরেটরিজ়) স্বীকৃত ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। তার সবক’টি রিপোর্টই মানোত্তীর্ণ।

    এমনকী, গত বছর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই কোম্পানির আরএলের যে ২৯টি নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় সিডিএসসিও (সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজে়শন) ল্যাবে, তার মধ্যে ২৫টি রিপোর্টই সন্তোষজনক। যার মধ্যে কর্নাটকের নমুনাও ছিল। তবে চারটি রিপোর্ট এখনও আসেনি।

    এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, রিপোর্টে কেন্দ্রীয় ল্যাব তাদের ‘রিমার্কস’–এ এ কথাও লিখেছিল যে, সিডিএসসিও–র অনুমোদিত সবক’টি মানোত্তীর্ণ উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছে ওই আরএল–গুলি। এবং এই সব কথাই হাইকোর্টের জনস্বার্থ মামলায় বৃহস্পতিবার উল্লেখ করা হয়েছে রাজ্যের তরফে।

    পাশাপাশি এ–ও জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত ওই সংস্থা বা তার কোনও ওষুধ এখনও দেশের কোথাও নিষিদ্ধ হয়নি। এমনকী, কর্নাটক সরকার ওই সংস্থাকে নিষিদ্ধ করেছিল ঠিকই। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জের পর নিষেধাজ্ঞায় সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে কর্নাটক হাইকোর্ট। তবে মেদিনীপুরের সাম্প্রতিক কেসের স্যাম্পল টেস্টের রিপোর্ট এখনও পেন্ডিং।

  • Link to this news (এই সময়)