রূপক মজুমদার, বর্ধমান
গুমটি তৈরি করে কিংবা স্থায়ী দোকান থেকে অনলাইন আউটডোর টিকিটের রমরমা কারবার চলছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালে যেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার কথা, সেখানে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের থেকে নেওয়া হচ্ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। কখনও সেই রেট চলে যেত ৩০ টাকায়।
১৬ তারিখ বৃহস্পতিবার ‘এই সময়’–এ সেই খবর প্রকাশিত হতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পুলিশি তৎপরতায় আপাতত বন্ধ ওই কারবার। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে সবার সাহায্য চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিনামূল্যে পরিষেবার সুযোগ নিয়ে টাকা রোজগারের কারবার বন্ধ করতেই হবে। এর জন্য এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।’ হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষের বক্তব্য, ‘রোগীদের বলছি, বাড়তি টাকা কেউ নিলে আমাদের জানাতে।’
এ দিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অনলাইন আউটডোর টিকিটের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দোকানের হোর্ডিং, ফ্লেক্সে অনলাইনে টিকিট বিক্রির কথা স্টিকার সাঁটিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, বর্ধমান থানার আইসি মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে নির্দেশ দেন যাতে অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হয় এই কারবার। পরে পুলিশ এসে ওই সব দোকান ও ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয়, টাকার বিনিময়ে এই ব্যবসা চালানো যাবে না। খুব বেশি হলে ব্যবসায়ীরা ২ টাকা পর্যন্ত নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশের যুক্তি, আউটডোরে টিকিট কাটতে গেলে ২ টাকা করে নেয় সরকার। ফলে এ ক্ষেত্রে ওই ছাড়টুকু পাবেন ব্যবসায়ীরা।
অনলাইন টিকিটের ব্যবসা করা শেখ মিঠুন বলেন, ‘মানুষের সুবিধার জন্যই কম্পিউটার, প্রিন্টার নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। পুলিশ এসে বলে গিয়েছে, ২ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। ২ টাকা নিলে আমাদের পোষাবে না। তাই বন্ধ করে দিয়েছি।’ আর এক ব্যবসায়ী শেখ মুস্তাক ওরফে জনি বলেন, ‘বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মানুষদের আমরা পরিষেবা দিতাম। আজ সকাল থেকে সব বন্ধ করে দিয়েছি।’ তাঁর সংযোজন, ‘আপনাদের (এই সময়) কাগজে ফলাও করে লেখা হলো আর আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে গেল।’
হাসপাতালের আউটডোরের এক কর্মী জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতি কয়েকদিন চলবে। তার পর ফের শুরু করে দেবে। পুলিশের একার পক্ষে এই ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি যে খুব ভুল কিছু বলেননি তার প্রমাণও মিলেছে এ দিন। খণ্ডঘোষ থেকে আসা এক রোগীর ছেলে অরিন্দম ঘোষ বলেন, ‘মাসখানেক আগে মাকে ডাক্তার দেখাতে এসে হাসপাতাল গেটের সামনের দোকান থেকে ২০ টাকা দিয়ে টিকিট করেছিলাম। আজও কিন্তু সেই ২০ টাকাই নিল। শুধু দোকানের বাইরে দাঁড়াতে বলল। পাঁচ মিনিট পরে এক জন এসে হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে গেল।’
হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘আমরাও নজরদারি চালাব। জানতে পারলে পুলিশকে ফের বলব।’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের নজরদারি থাকবে। লুকিয়ে কেউ এই কাজ করলে কম্পিউটার, প্রিন্টার বাজেয়াপ্ত করা হবে।’ তবে পুলিশের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী।
সুকদেব ঘোষ নামে হাসপাতাল এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আউটডোর টিকিট পাওয়া যায় জানিয়ে কাল থেকে বোর্ডে লিখে ব্যবসা করব। ২ টাকা করেই নেব। একটি কাগজ প্রিন্ট করাতে খুব বেশি হলে ৮০ থেকে ৯০ পয়সা খরচ হয়। তাতেও আমার প্রতি কপিতে ১ টাকা ২০ পয়সার মতো লাভ থাকবে। প্রচুর রোগী পাব।’