• চুলের ছাঁট রক্ষায় হেলমেটে অনীহা! নেই প্রাণের পরোয়া
    এই সময় | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি

    কারও মাথায় হেলমেট নেই। কেউ পাঁচ বছরের শিশুকে বাইকের পিছনে বসিয়ে তীব্র বেগে মোটরবাইক ছোটাচ্ছেন। ছোট্ট শিশু বাইকের পিছনে বসে কচি দুটো হাত দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছে বাইক চালককে আঁকড়ে ধরার। কেউ তো আবার সদ্য যেন সার্কাস ছেড়ে রাস্তায় নেমেছেন। ট্রাক, ছোট গাড়িকে বিপজ্জনক ভাবে ওভারটেক করছেন।

    শুক্রবার ইস্টার্ন বাইপাসের হাল দেখে আঁতকে উঠল পুলিশই। গত কয়েকদিন ধরে ইস্টার্ন বাইপাসে একের পর এক দুর্ঘটনা এবং একটি পাঁচ বছরের শিশু–সহ দু’জনের মৃত্যুর পরে এ দিন ইস্টার্ন বাইপাসে নজরদারিতে নামেন পুলিশ কর্মীরা। তাতেই ধরা পড়ে এই ছবি।

    ট্রাক কিংবা গাড়ি চালকদের পাশাপাশি বেপরোয়া চলাচলে কমতি যাচ্ছেন না মোটরবাইক এবং স্কুটি চালকেরাও। আশিঘর মোড়েই পুলিশ এ দিন আটকায় দীগেন রায়কে। নেপালি বস্তি লাগোয়া এলাকা থেকে বাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন শিলিগুড়িতে। দীগেনবাবুর দাবি, তিনি প্রতিদিন হেলমেট পরেই রাস্তায় বার হন। কেবল এ দিনই হেলমেট পড়তে ভুলে গিয়েছিলেন।

    পুলিশ দীগেনবাবুকে আইন মোতাবেক ফাইন করে। যদিও ওই পুলিশ আধিকারিকের সন্দেহ, ‘দুর্ঘটনা কেন ঘটছে এতদিন তার জবাব চেয়ে রাস্তা অবরোধ হচ্ছিল। এ বার নিশ্চিত ভাবে পুলিশ কেন হেলমেট নিয়ে কড়াকড়ি করছে তার কৈফিয়ত চেয়ে আন্দোলন শুরু হবে।’

    গত সোমবার সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে স্কুটিতে টিউশন থেকে ফেরার পথে পাঁচ বছরের এক শিশু ট্রাকের চলায় চাপা পড়ে মারা যায়। একটি ট্রাক বেআইনি ভাবে লেন বদল করার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ওই ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তার প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন খোদ এলাকার বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। ঘটনার রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই গত বৃহস্পতিবার ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া ইসকন মন্দির রোডে মালতি রায় নামে এক বিজেপি নেত্রী ট্রাকের তলায় চাপা পড়ে মারা যান। এ বারও আন্দোলনে নামেন এলাকার বাসিন্দারা।

    পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, প্রয়োজনীয় ট্র্যাফির সিগনাল ব্যবস্থা নেই ইস্টার্ন বাইপাসে। এমনকী, ক্রসিংয়ে সর্বত্র পুলিশকর্মী থাকেন না। ফলে যানবাহন তীব্র গতিতে যাতায়াত করলেও নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। তার পরেই এ দিন অভিযানে নামে পুলিশ। একের পর এক গাড়ি আটক করা হয়। নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখা হয়। তেমনই হেলমেটহীন বাইক ও স্কুটি চালকদেরও জরিমানা করা হয়।

    পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার রঞ্জন শীলশর্মা। তিনি বলেন, ‘ইস্টার্ন বাইপাস এখন শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা। সারাদিন ধরে অসংখ্য যানবাহন যাতায়াত করে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে না বলা যাবে না। তবে পুলিশ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। এর পরে দুর্ঘটনা কমবে।’

  • Link to this news (এই সময়)