অ্যাডভেঞ্চারে স্পোর্টসে বিশেষ নজির গড়ার স্বীকৃতি পেলেন কালনার জলকন্যা সায়নী দাস। শুক্রবার দিল্লিতে তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার আওয়ার্ড ২০২৩ পুরস্কারে সম্মানিত হলেন তিনি। এ দিন দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনের গণতন্ত্র মণ্ডপে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তেনজিং নোরগের মূর্তি, শংসাপত্র ও অ্যাওয়ার্ড মানি হিসেবে সায়নীর হাতে তুলে দেওয়া হয় ১৫ লক্ষ টাকা।
অর্জুন পুরস্কারের সমতুল এই পুরস্কার পেয়ে সায়নী বলেন, ‘এটা একটা বড় স্বীকৃতি। প্রয়োজন ছিল। তবে প্রেস্টিজিয়াস এই পুরস্কার পেয়ে চাপ এবং দায়িত্ব দুটোই বাড়ল। ফটো সেশনের সময় রাষ্ট্রপতি বলছেন, দেশকে গর্বিত করার জন্য ধন্যবাদ। আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে বলেছেন তিনি।’
ইতিমধ্যে সপ্ত সিন্ধুর পাঁচটি জয় করে ফেলেছেন সায়নী। ২০১৭ সালে জীবনের প্রথম অভিযানেই তিনি জয় করেন ইংলিশ চ্যানেল। তার পর একে একে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে ক্যাটালিনা, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মলোকাই, নিউ জিল্যান্ডের কুক প্রণালী ও উত্তর আয়ারল্যান্ড–স্কটল্যান্ডের মধ্যে নর্থ চ্যানেলের বাধা অতিক্রম করেন তিনি। এর মধ্যে ২০২৪–এ একই বছরে কুক ও নর্থ চানেল পারাপার করেন।
পাশাপাশি জয় করেছেন রটনেস্ট চ্যানেলও। যদিও তা সপ্ত সিন্ধুর তালিকায় নেই। এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে পঞ্চ সিন্ধু জয় করেন কালনার এই অভিযাত্রী। একই সঙ্গে ভারতের প্রথম মহিলা হিসেবে তিনি জয় করেছেন নর্থ চ্যানেল।
কালনা শহরের বারুইপাড়ার বাসিন্দা সায়নী অ্যানথ্রোপলজিতে স্নাতকোত্তরে পড়ছেন ইগনু থেকে। এ বছরই তা সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরিতে যোগ দিলেও অনুশীলনের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। আপাতত সায়নীর পাখির চোখ, জিব্রাল্টার ও সুগারু চ্যানেল অতিক্রম করে সপ্ত সিন্ধুর শিরোপা অর্জন করা। চলতি বছরেই তিনি জিব্রাল্টারের লক্ষ্য পেরতে চান। তিনি জানান, জিব্রাল্টার অভিযানের কনফার্মেশন লেটারও পেয়ে গিয়েছেন।
আগামী ১৪ থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে জলে নামার কথা তাঁর। এ দিন দিল্লি থেকে সায়নী বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় কালনায় ফিরব। তার পর রবিবার থেকে গঙ্গায় পুরোদমে প্রাক্টিস শুরু করে দেবো।’ তবে টাকা জোগাড় করাই এখন তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সায়নী বলেন, ‘জিব্রাল্টারের খরচ ১৪ লক্ষ টাকা। টাকার জন্য ক্রাউড ফান্ডিং করেছি। তবে তাতে লক্ষ্যমাত্রার সামান্যই উঠেছে। জানি না কী ভাবে টাকা জোগাড় হবে।’
পুরস্কার মূল্যের বেশিটাই ধার শোধ করতে খরচ হয়ে যাবে জানিয়ে সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাস বলেন, ‘ওর পুরস্কারের ১৫ লক্ষ টাকার বেশিটাই চলে যাবে ধার শোধ করতে। এলআইসি, তার পর বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ধার রয়েছে। সুশীল মিশ্র, সুরজিত বক্সী ও অসংখ্য মানুষের শুভেচ্ছায় সায়নী এগিয়ে যাচ্ছে।’