• স্কুল পরিদর্শনে এসে শিক্ষক হয়ে উঠলেন মহকুমাশাসক
    এই সময় | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি

    প্রতিদিন তাঁর টেবিলে জমে ফাইলের পাহাড়। তবে এ দিন টেবিলের সামমে বসলেও রোজকারের মতো ফাইলের বদলে হাতে তুলে নিলেন খুদেদের পাঠ্যবই। তার পর যথারীতি শিক্ষক হয়ে উঠলেন মহকুমাশাসক।

    অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের মান যাচাই করতে অতর্কিতে অভিযানে গিয়েছিলেন স্কুলগুলিতে। শুক্রবার জলপাইগুড়ি সদর মহকুমাশাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী প্রথমে ভিজ়িত করলেন জলপাইগুড়ি শহরের আদরপাড়া দক্ষিনেরশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। একই দিনে তিনি সাউথ পিলখানার একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও যান। সেখানে গিয়ে পড়ানোর পাশাপাশি পড়ুয়াদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতেও দেখা যায় তাঁকে।

    প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে কী ভাবে পঠনপাঠন চলছে? সেখানে মিড–ডে মিল ঠিক মতো দেওয়া হচ্ছে কিনা, এই সমস্ত বিষয়ের হালহকিকত জানতে হঠাৎ স্কুল ও আইসিডিএস সেন্টারগুলিতে হাজির হচ্ছেন স্থানীয় মহকুমা শাসক। কখনও সাত সকালে হাঁটতে বেরিয়ে ট্রাক–প্যান্ট আর জ্যাকেটে পরেই কেন্দ্রে ঢুকছেন এসডিও। আবার, কখনও বা বেলা ১০ টা নাগাদ সারপ্রাইজ় ভিজি়টে যাচ্ছেন কোনও না কোনও স্কুলে। কখনও আবার হানা দিচ্ছেন একেবারে মিড–ডে মিলের সময়ে।

    এ দিন সকালে তিনি হাজির হন আদরপাড়া দক্ষিণেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আচমকা এসডিও সাহেবকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দেখে একেবারে হতচকিয়ে যান বিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষিকা থেকে শুরু করে মিড–ডে মিল কর্মী, সহায়িকা সকলেই। ক্লাসরুমে ঢুকেই খুদে পড়ুয়াদের কাছ থেকে কবিতা শোনার আবদার করেন মহকুমাশাসক। তারাও আগ্রহী হয়ে কবিতা শোনাতে শুরু করে। ওদের উৎসাহ দিতে কবিতা শুনে হাততালিও দেন তমোজিৎ। তৃতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়া তখনও বুঝে উঠতে পারেনি, স্কুল পরিদর্শনে এসেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। সে বলল, ‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, আমাদের নতুন স্যার এসেছেন।’

    এর পরে পড়াশোনার বিষয়ে দু-চারটে প্রশ্নও করেন তিনি। কিছুক্ষণ তাঁদের ক্লাস ‍নিয়ে প্রায় ঘণ্টা খানেক খুদেদের সঙ্গে কাটিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। সংবাদ মাধ্যমের কাছে এসডিও বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়–অঙ্গনওয়ারি সেন্টারগুলোর পড়াশোনা এবং খাবারের মান নিয়ে রাজ্য সরকার কোনও রকম গাফিলতি শুনতে রাজি নয়। স্কুল এবং সেন্টারগুলি বর্তমানে কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার সঠিক ধারণা নিতেই সারপ্রাইজ ভিজি়টে যাওয়া।’ আগামী দেড় মাসের মধ্যে এলাকার সমস্ত সেন্টারে ভিজি়ট করে একটা রিপোর্ট তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

    অপর্ণা পাল দাস নামক এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কথায়, ‘এ দিন এসডিও সাহেব এখানে এসে সেন্টারের সমস্ত খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি মিড–ডে মিলের চাল, ডালের সাপ্লাই ও মজুত নিয়েও কথা বলেন। সেই সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে তালিকা মেনে ‍বাচ্চাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারেও খোঁজ নিয়েছেন।’

  • Link to this news (এই সময়)