• জ্যোতি বসুকে নিয়ে কারাটের ভাষণে ফিরল ‘ভুল’-এর স্মৃতি
    এই সময় | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: সংসদীয় কাঠামোর মধ্যে থেকে কমিউনিস্টরা কী ভাবে কাজ করবেন, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ জ্যোতি বসু— শুক্রবার নিউ টাউনে রাজ্যের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর নামাঙ্কিত গবেষণাকেন্দ্রের উদ্বোধন করতে এসে এমন মন্তব্যই করলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর কো–অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট। যা মুহূর্তে ফিরিয়ে এনেছে ১৯৯৬–এ জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসানো নিয়ে সিপিএমের অন্দরে দড়ি টানাটানির স্মৃতি। যে বিতর্কের শেষে প্রধানমন্ত্রী হতে না পারা জ্যোতিবাবুকে সেই সময়ে আক্ষেপের সুরে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘ঐতিহাসিক ভুল’।

    সংসদীয় কাঠামোর মধ্যে থেকে কমিউনিস্টরা কী ভাবে কাজ করবেন, তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে নানা মত রয়েছে। ১৯৯৬–এ কোয়ালিশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ যখন জ্যোতিবাবুর সামনে এসেছিল, তখন তাঁর দলেরই একাংশ বেঁকে বসেছিলেন। যে শিবিরের সব থেকে উল্লেখযোগ্য মুখ ছিলেন প্রকাশ কারাট। মূলত তাঁর তীব্র আপত্তিতে জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি।

    পরবর্তীতে আর কখনও কমিউনিস্টদের কাছে সেই সুযোগ ফিরেও আসেনি। কারাটদের যুক্তি ছিল, যে কোয়ালিশন সরকারে সিপিএম নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় থাকতে পারবে না, সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারেও সিপিএমের কেউ বসবেন না। জ্যোতি বসু শিবিরের পা‍ল্টা যুক্তি ছি‍ল, সংসদীয় রাজনীতিতে থেকেও প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসব না, এই তত্ত্ব অচল। জ্যোতি বসুর মতো কেউ প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসলে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, ত্রিপুরার বাইরে পার্টির বিস্তারের সম্ভাবনা বাড়বে।

    শুক্রবার নিউ টাউনের অনুষ্ঠানে কারাট বলেন, ‘জ্যোতি বসু কমিউনিস্ট আন্দোলনের অগ্রগতির প্রতীক। বাম আন্দোলনে তাঁর অবদান নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। দেশ বা পশ্চিমবঙ্গে তাঁর ভূমিকা অনবদ্য। কী ভাবে সংসদীয় কাঠামোয় কমিউনিস্টরা কাজ করবেন তার উদাহরণ জ্যোতি বসু।’ তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এক প্রবীণ সিপিএম নেতার মন্তব্য, ‘উনি ঠিকই বলেছেন, সংসদীয় কাঠামোর মধ্যে থেকে কমিউনিস্টদের কী ভাবে কাজ করা উচিত, তার সব থেকে ভালো উদারণ জ্যোতিবাবুই। ১৯৯৬ সালেও যদি এই ভরসা কারাটদের থাকত, তা হলে ভারতের রাজনীতি সিপিএমের এত করুণ দশা হতো না। সংসদীয় কাঠামোতেই যদি জ্যোতিবাবু প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন, তা হলে আজ দেশজুড়ে বিজেপির দাপাদাপি থাকত না।’

    এ দিন বিজেপিকে আক্রমণ করার ক্ষেত্রেও প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে হাতিয়ার করেন কারাট। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর জ্যোতিবাবু বিজেপিকে ‘বর্বর’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। সে কথা স্মরণ করিয়ে কারাট এ দিন বলেন, ‘যে শক্তিকে জ্যোতি বসু অসভ্য–বর্বর বলেছিলেন, তারাই এখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। হিন্দুত্বকে রাষ্ট্রের দর্শনে পরিণত করার চেষ্টা করছে। কেবল নির্বাচন নয়, মতাদর্শের লড়াইও করতে হবে এই শক্তির বিরুদ্ধে।’ কারাট ছাড়াও রাজ্যের শীর্ষ সিপিএম নেতারা সবাই এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।

    সিপিএম ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগেই ঠিক করেছিলেন নিউ টাউনের নাম হবে ‘জ্যোতি বসু নগর’। কিন্তু সেই সরকারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। নিউ টাউনের নাম বদলের দাবিতে সিপিএম ফের সরব হবে বলেও এ দিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, এসইউসি–র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পালরা। আমন্ত্রিত হলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য থাকতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। নিজের রাজ্যে বিধানসভার অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণ থাকায় কলকাতায় আসতে পারেননি কেরালার মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই বিজয়ন। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে পরে তিনি কলকাতায় আসতে পারেন।

  • Link to this news (এই সময়)