দেবাশিস দাস
স্থানীয়রা ওই জমিকে পাড়ার খেলার মাঠ বলেই জানেন। তাঁদের বক্তব্য, মালিক হিসেবে কাউকে কখনও এলাকায় দেখাও যায়নি। পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠান তো বটেই, সরকারি অনুষ্ঠানও ওই জমিতেই হয়। অথচ হালফিলে সেই জমিরই মালিকানা দাবি করে এলাকায় নিয়মিত বাহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছে। তাঁরা দাবি করছেন, ওই জমির মালিক আছে।
বেহালার ১২১ নম্বর ওয়ার্ডে এমন পাঁচটি মাঠ ঘিরে ব্যক্তিগত মালিকানার দাবি উঠছে বলে কাউন্সিলার রূপক গঙ্গোপাধ্যায় পুরকর্তাদের জানিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, মালিকানার দাবি নিয়ে এলাকায় মাঝেমধ্যেই অশান্তি হচ্ছে। বহিরাগতরা হাজির হলে তাঁদের ঘিরে ধরে স্থানীয়রা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
রূপক জানান, তাঁর ওয়ার্ডের নেতাজি সড়ক গদাইবুড়ির মাঠ, স্বামীজি সড়ক ইয়ং বেঙ্গলের মাঠ, বড়িশা যুগযাত্রী ক্লাবের মাঠ, বড়িশা একতা সঙ্ঘের মাঠ এবং নবতরুণ সঙ্ঘের মাঠ প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকার বাসিন্দারা প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে আসছে। এই সব মাঠে ‘খেলা হবে দিবস’, ‘দুয়ারে সরকার’–সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অনুষ্ঠানও নিয়মিত হয়। কাউন্সিলারের অভিযোগ, স্থানীয়দের কেউ বাধা দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। এমনকী হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। ঘটনা হলো, বেহালার একাধিক কাউন্সিলারের বক্তব্য, তাঁদের ওয়ার্ডেও এমন সমস্যা মাথাচাড়া দিচ্ছে। হচ্ছে অশান্তিও।
রূপক বলেন, ‘পুরকর্তারা বিবেচনা করে এই ধরনের খেলার মাঠ বাঁচাতে আইন আনুন। জলাভূমি সরক্ষণের মতো শহরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলার মাঠও সংরক্ষণ করতে হবে।’ পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, এই জমিগুলির রেকর্ড খতিয়ে দেখা হবে। তবে এই সব মাঠ যদি পুরসভাকে সংরক্ষণ করতে হয়, তা হলে জমির বাজারদর অনুয়ায়ী মালিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে সেগুলি অধিগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু পুরসভার সেই আর্থিক ক্ষমতা এখন নেই।
‘খেলার মাঠ’ বাঁচাতে এলাকার অধিকাংশ ক্লাব মিলে ‘বেহালা ক্লাব সমন্বয় প্রস্তুতি মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছে। আগামী ১৯ তারিখ একটি মিছিলের ডাকও দিয়েছে তারা। বেহালার সাধারণ বাসিন্দাদের এই মিছিলে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে পাড়ায় পাড়ায় পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। প্রচার চলছে মাইকেও। মিছিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট চার ওয়ার্ডের কাউন্সিলার এবং দুই বরোর চেয়ারম্যানকেও।
মঞ্চের অন্যতম কর্তা এবং স্বামীজি সড়ক ইয়ং বেঙ্গল ক্লাব কমিটির সম্পাদক আমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘১৯৮৪–তে আমাদের ক্লাব তৈরি হয়েছিল। সেই সময় হোগলা বন কেটে, জমিতে মাটি ফেলে এই মাঠ তৈরি করা হয়েছিল। তার পর থেকে একেক সময়ে একেক জন এসে মাঠের জমির দাবি জানান। কিন্তু কেউ নথি দেখাতে পারেননি। মাঝে দশ–বারো বছর এটা বন্ধ হয়েছিল। এ বার অন্য একটা দল জমির দাবি জানিয়ে হাজির হয়েছে।’ বেহালার বড়িশা একতা সঙ্ঘের সভাপতি আশিস মজুমদার বলেন, ‘মাঠ বাঁচাতে আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াইও চলবে। মঞ্চের প্রথম বৈঠকে আমাদের ক্লাবের তরফে সে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’