আরজি কর কাণ্ডে শনিবার রায় ঘোষণা করেছেন শিয়ালদা আদালত। সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, রায় সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হতেই কোর্ট রুমে কেঁদে ফেলেন নির্যাতিতা ডাক্তারের বাবা। তারপর হাতজোড় করে বিচারকের উদ্দেশে কিছু বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিচারক অনির্বাণ দাস বলার অনুমতি দেন। কাঁদতে কাঁদতেই বিচারককে ধন্যবাদ জানান নির্যাতিতার বাবা। তারপর বলেন, আদালতের ওপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমি আপনার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেছি। আমাদের বিশ্বাসকে সম্মান করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।' পাল্টা বিচারক অনির্বাণ দাস বলেন,'ধন্যবাদ, সোমবার দেখা হবে।'
শনিবার আরজি কর কাণ্ডে সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে শিয়ালদা আদালত। অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস সোমবার সাজা ঘোষণা করবেন। তার আগে সঞ্জয়ের বক্তব্য শুনবেন বিচারক। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ ও ১০৩(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয় রায়কে। গত ১১ নভেম্বর থেকে আরজি কর মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল শিয়ালদা আদালতে। আদালত দোষী সাব্যস্ত করার পর সঞ্জয় বলে, 'আমি গলায় সবসময় রুদ্রাক্ষের মালা পরি। যদি আমি অপরাধ করে থাকি, তা হলে ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে আমার ওই মালা ছিঁড়ে পড়ে যেত। আমি এই অপরাধ করিনি। আমি কিছুই করিনি। আমায় ফাঁসানো হয়েছে। যারা আমাকে ফাঁসিয়েছে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কেন?' পাল্টা বিচারক বলেন, 'আমি সব সাক্ষ্য-প্রমাণ পরীক্ষা করেছি, যুক্তিও শুনেছি। তারপরই আমি তোমাকে দোষী মনে করেছি। তুমি অপরাধী। তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।'
গত বছররে ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় হয় বাংলা। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতিবাদে উত্তাল হয় দেশও। ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সমাজের সর্বস্তরে প্রতিবাদের ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল। স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাতে রাত দখল কর্মসূচিতে বেনজির প্রতিবাদের সাক্ষী থেকেছিল বাংলা। দীর্ঘদিন ধরে কর্মবিরতি চালিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন তাঁরা। ধর্মতলায় আমরণ অনশনও হয়েছিল। ঘটনার পরের দিনই কলকাতা পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করেছিল। পরে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয় আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে শেষে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরায় রাজ্য সরকার। পুজোর পরে খানিকটা থিতু হয় আন্দোলন। এদিকে, চার্জশিট না দেওয়াতে এই মামলায় জামিন পেয়ে যান সন্দীপ ও অভিজিৎ। গ্রেফতারের ৯০ দিন পরেও চার্জশিট দিতে পারেনি সিবিআই। সে কারণেই সন্দীপ-অভিজিৎকে জামিন দেয় শিয়ালদা আদালত। তবে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় জেলেই রয়েছেন সন্দীপ। আরজি কর কাণ্ডে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা বিরলতম ঘটনা বলে মন্তব্য করে সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবি করেছিল সিবিআই। সঞ্জয় রায়কেই একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে চার্জশিটে উল্লেখ করেছিল সিবিআই-ও। যদিও ধৃতের আইনজীবী সওয়াল করেছিলেন, এই স্বপক্ষে সিবিআই যে প্রমাণ দিচ্ছে, তা অপর্যাপ্ত। সঞ্জয় এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। এছাড়াও নির্যাতিতার শরীরে ধস্তাধস্তির কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গোটা ঘটনাটি সাজানো হতে পারে। ধৃতকে ফাঁসানো হয়েছে। অভিযুক্ত কিছুই করেনি। অভিযুক্তের আঙুলের ছাপও মেলেনি। হতে পারে পুরোটাই পরে সাজানো হয়েছে।