• ১৭ দিন পর ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দিল জিনাত-সঙ্গী, নতুন করে শুরু বাঘবন্দি খেলা
    প্রতিদিন | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, বান্দোয়ান (পুরুলিয়া): এই প্রথম পুরুলিয়ার জঙ্গলে বনদপ্তরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। সিমলিপাল ব্যাঘ্রপ্রকল্প থেকে আসা জিনাত এই জেলায় ৬ দিন কাটানোর পরেও ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দেয়নি। তবে জিনাতের পুরুষসঙ্গী বাংলায় এসে ৭ দিনের মাথায় বনবিভাগের ক্যামেরায় ধরা দিল। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ঝাড়খণ্ড-বাংলায় লুকোচুরি খেলার ১৮ দিনের মাথায় তার ছবি পাওয়া গেল। এই ঘটনাকে বড়সড় সাফল্য বলেই দেখছে রাজ্যের বনবিভাগ।

    পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে নির্বিঘ্নে রয়্যাল বেঙ্গল ঘুরে বেড়াচ্ছে। জঙ্গলমহল বাঘের জন্য একেবারেই সুরক্ষিত। ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবিতে সমৃদ্ধ হল পুরুলিয়ার বনাঞ্চল। সব মিলিয়ে খুশি রাজ্যের বন বিভাগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত জিনাত সঙ্গীর পরপর তিনবার সাইটিং হয়। বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের নেকড়ার পর মানবাজার দুই বনাঞ্চলের জয়পুরে মেলা ফেরত এক মোটরবাইক আরোহী ও বিক্রমডি গ্রামের বনদপ্তরের প্রচারের গাড়ির কর্মীদের চোখে দর্শন দেয় সে। ওই রাতেই নেকড়া হয়ে ফেরার পথে বেলডুংরি এলাকায় পায়ের ছাপ মেলে। পদচিহ্ন মেলে যমুনগোড়াতেও। ভাঁড়ারির জঙ্গলে ভোর ৩টে ২৪ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে সে ক্যামেরায় ধরা দেয়।

    রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায় বলেন, “বনদপ্তরের পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় এই প্রথম পুরুলিয়ার জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি ধরা পড়ল।” তবে আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে বাঘিনীর মূত্র দিয়ে তিনটি ছাগলের টোপ দিলেও সবুজ খাঁচাতে বন্দি হয়নি সে। এই ছবি থেকে বাঘবন্দি অভিযানের নীল নকশা সাজিয়েছে বনদপ্তর। দলে শামিল রয়েছেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিশেষজ্ঞরা। বেলা তিনটে থেকে একেবারে বাঘের ডেরায় গিয়ে বাঘবন্দি অভিযানে থাকবে ১৪টি দল। সুন্দরবন থেকে দুজন, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের একজন করে শুটারও আছেন এই অভিযানে। দলগুলি কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ৬টি ও বাঁকুড়ার ৩টি রেঞ্জের কর্মীরা অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।

    বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটায় রাত ১১ টা বেজে ১০ মিনিট। চাঁদের আবছা আলো পড়ছে রাইকা পাহাড়ে। পাহাড়তলির শুনশান গ্রাম দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বনদপ্তরের হেডলাইট জ্বালানো গাড়ি। পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের বান্দোয়ান এক বনাঞ্চলের জঙ্গল-পাহাড় ঘেরা গ্রামে কনকনে শীত। এখন সর্বনিম্ন ৮-৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বাঘের ভীতিতে যেন বিকালেই দরজায় খিল পড়ছে। দিনের বেলাতেও জঙ্গলের পথ একেবারে শুনশান। গ্রামের মোড়েও সেভাবে ভিড় নেই। সন্ধ্যার পর জিনাত সঙ্গী মানবাজার দুই বনাঞ্চলে এক চক্কর কেটে আবার ফিরেছে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ের ভাঁড়ার টিলার জঙ্গলে।

    বিভিন্ন জায়গায় বনকর্মীরা পাহারা দিচ্ছেন। পাহাড়তলির এই শ্যাডো জোনে ওয়াকিটকিতে খবর যায় কেন্দাপাড়ার এক মহিলা টর্চের আলোয় বাঘের জ্বলজ্বল করা চোখ দেখতে পেয়েছেন। এই খবর চাউর হতেই গ্রামের বহু মানুষ লাঠি, ধারালো অস্ত্র নিয়ে বার হন। রাহামদা মোড়ে থাকা বনদপ্তরের গাড়ি ঘুরিয়ে গন্তব্য হয় ওই গ্রাম। বান্দোয়ান সদর থেকেও আসেন বিট অফিসার সহ অন্যান্য কর্মীরা। রাস্তায় বার হওয়া পুরুষ-মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা হয় পায়ের ছাপ। পদচিহ্ন বলে আর যাই হোক বাঘ নয়। তবে মানুষের দাবিতে এলাকায় পটকা ফাটানো হয়।

    বান্দোয়ানের জানিঝোর গ্রামের বাসিন্দা যুধিষ্ঠির মাহাতো বলেন, “বাঘটা আমার মোটরবাইকের পাশ দিয়ে ডানদিকে গিয়ে দাঁড়াল। আমি বাঘকে অতিক্রম করে পার হলাম। বুঝলাম বাঘটি আক্রমণাত্মক নয়। বাঘ যদি নিজের মতো করে জঙ্গলে থাকে, থাকুক। আমাদের কোনও অসুবিধা নেই।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)