• বোনের জন্য ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে পিঠে বানান ভাইয়েরা, বাঁকুড়ার এই উৎসবের ইতিহাস জানেন?
    এই সময় | ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • টগবগ করে ফুটছে ঘি। তার মধ্যেই হাত ডুবিয়ে দিচ্ছেন সকলে। তৈরি হচ্ছে গুড় পিঠে। কোনও মিষ্টির দোকানে নয়, বহুদিনের এই রীতি বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের পাকুড়ডিহা গ্রামে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুরুষদের এমন কৃচ্ছসাধনের ইতিহাস শুধু এ দেশে নয়, সারা বিশ্বেই বিরল।

    বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে গ্রামের অদূরে হয় বিশেষ পুজো। সেখানেই ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে গুড় পিঠে তৈরি করেন পুরুষরা। কিন্তু কেন? ‘সাত ভাই চম্পা’র গল্প সকলেরই জানা। দেশে দেশে বিভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রূপকথায় বর্ণিত হয়েছে সেই গল্প। সাত ভাই-এর জীবন বাঁচাতে প্রাণ বাজি রেখেছিলেন একমাত্র বোন। সেই বোনের স্মৃতিতেই দাদা’রা যোগদান করেন এই পার্বণে।

    বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এই গ্রাম আপাদমস্তক জঙ্গলে ঘেরা। আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে গ্রামকে ঘিরে ছিল আরও ভয়ঙ্কর ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলের উপরেই নির্ভরশীল ছিল গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা। পুরুষেরা জঙ্গল থেকে পশু-পাখি শিকার করে এবং ফলমূল, কাঠ সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরলে পরিবারের সকলে মিলে তাই ভাগ করে খেতেন। 

    কথিত আছে, আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে পাকুড়ডিহা গ্রামে সাত ভাই ও বোনের এক সংসার ছিল। সাত ভাই সকাল হলেই বের হতেন পশু শিকারে। দক্ষ শিকারী সেই সাত ভাই একদিন জঙ্গলে শিকারে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। একমাত্র বোনের বুঝতে দেরি হয়নি সাত ভাই কোনও বিপদে পড়েছেন। বোন একাই জঙ্গল তন্নতন্ন করে খুঁজে বন্যপ্রাণীর আঘাতে গুরুতর আহত হয়েও সাত ভাইকে উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।

    বোনের একক চেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর সেবা-যত্নে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন সাত ভাই। সেই আদিবাসী বোন তাঁর আত্মত্যাগের জন্য আদিবাসী সমাজে দেবী রূপে প্রতিষ্ঠা পান। পাকুড়ডিহা গ্রামে সেই বোনের স্মৃতিতেই শুরু হয় ‘সাত ভায়া মিট্টাং মেশ্রা’ মতান্তরে ‘সাত ভাইয়া মিট্টাং বেহানা’ উৎসবের। যা পালন হয়ে আসছে আজও।

  • Link to this news (এই সময়)