অভিরূপ দাস: অভয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের হয়ে গলা ফাটাতে রাস্তায় নামছে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট! গত আগস্টে আর জি করের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ, খুনের পুলিশি তদন্তে অখুশি ছিলেন আর জি কর-সহ রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির জুনিয়র ডাক্তাররা। জানুয়ারিতে তাঁরা অনাস্থা প্রকাশ করলেন সিবিআই তদন্ত নিয়েও। সঞ্জয় শনিবার দোষী সাব্যস্ত হতেই মনমরা জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। কথা ছিল, শনিবার শিয়ালদহ কোর্টে অভয়াকাণ্ডের রায়দানকে কেন্দ্র করে আদালত চত্ত্বরে প্রতিবাদ করবে ফ্রন্ট। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে পুলিশ সেই অনুমতি দেয়নি। দুপুরে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয়কে। সোমবার সাজা ঘোষণা।
এদিন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরই সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন ফ্রন্টের কেউ কেউ।শুরু হয় লিফলেট বিলি। যেখানে কুড়িটা প্রশ্ন তুলেছে ফ্রন্ট। প্রথমেই লেখা, বিচার পাওয়া যায়নি। নাগরিক সমাজের অনেকের প্রশ্ন, “বিচার পেতেই তো সিবিআইয়ের দাবি করেছিল ফ্রন্ট। এখন সেখানেও অনাস্থা?” রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ”প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কারও কারও দোষী পছন্দ হয়নি।”
উল্লেখ্য, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসক খুনের পর তদন্তে নেমেই সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশ। সেসময় পুলিশের কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ দাবি করে, পুলিশ নয়, সিবিআই চাই। সেই সিবিআই আর জি কর কাণ্ডে মূল দোষী হিসেবে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধেই চার্জশিট জমা দেয়। সেই চার্জশিট খতিয়ে দেখেই শিয়ালদহ কোর্ট শনিবার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। এদিন প্রেস বিবৃতি দিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে জানিয়েছেন, “সিবিআই তদন্ত প্রক্রিয়ার গতি দেখে আশঙ্কা হয়েছিল হয়তো প্রকৃত দোষীরা ধরা পড়বে না, একা সঞ্জয় রায় দোষী বলে সাব্যস্ত হবে। আমাদের এই আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, তা শিয়ালদহ কোর্টে অভয়া মামলার রায়ে পরিষ্কার হল।”
কিন্তু আর জি কর আন্দোলনকারীদের এই ‘ডিগবাজি’ দেখে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই বলছেন, ধর্ষিতার বদলে এবার ধর্ষকের হয়ে রাস্তায় নামতে চাইছেন তাঁদের কেউ কেউ! ফ্রন্টের লিফলেটে লেখা হয়েছে কেন্দ্র রাজ্য সেটিং তত্ত্বের কথা, নির্বাচনে যে তত্ত্ব তোলে বামেরা। সেই লিফলেট পড়ে অনেকেই বলছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ধরা পড়ে গিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠছে লিফলেটের শেষ পয়েন্টটি নিয়ে। যেখানে লেখা, “অপরাধী রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষমতাবান নয় বলেই কি এত তাড়াতাড়ি তাঁকে শাস্তি দেওয়া গেল?” অর্থাৎ সঞ্জয় আদৌ ধর্ষণ-খুনের অপরাধী কি না, তা নিয়ে প্রকারান্তরে সংশয় প্রকাশ করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সোমবার হয়তো সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা হবে সঞ্জয়ের। তার আগে থেকেই সোমবার ফের শহরজুড়ে মিটিং-মিছিলের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ।
শনিবার সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, “বিচার আজও অধরা রয়ে গেল। মানুষের ক্ষোভের আগুন নিভল না। তাই লড়াইয়ের রাস্তা আমরা ছাড়ছি না।” তবে আর জি কর আন্দোলনকারীরা সকলে এক পথে নেই। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকে ডা. রাজীব পাণ্ডে জানিয়েছেন, ”সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণার বিরোধিতা করছি না। যদি সত্যিই সিবিআই তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়ে থাকে নিশ্চয়ই তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।”