নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ব্যস্ত বিডিও অফিস চত্বরেই নীল সাদা দোতলা বাড়িটা। যদিও তার অবস্থান এক প্রান্তে। তবে দূর থেকে দেখলেই বোঝা যায়, সেখানে মানুষের পা পড়ে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেই ফেললেন, মহকুমা উদ্যানপালন দপ্তর হলেও এখানে কাজ কিছুই হয় না। কারণ? খোঁজ করে জানা গেল, তিন বছর ধরে নাকি সেই অফিসে কোনও আধিকারিকই নেই!
নদীয়া জেলাকে ফুলচাষের ‘মক্কা’ বললে অত্যুক্তি হয় না। যার মধ্যে রানাঘাট ২ ব্লকে ফুলচাষ হয় সবচেয়ে বেশি। হাওড়ার জগন্নাথ ঘাটের পর সবচেয়ে বড় ফুলবাজার নাকি এই ব্লকের নোকাড়িতেই। তাই রানাঘাট মহকুমা উদ্যানপালন দপ্তরের সরকারি ভবন তৈরি করা হয়েছিল রানাঘাট ২ ব্লক অফিস চত্বরেই। অথচ সেই দপ্তরই ভুগছে রক্তাল্পতায়। না আছে পর্যাপ্ত কর্মী, না আছে সর্বোচ্চ অধিকারিক। এককথায় ‘মহকুমা উদ্যানপালন দপ্তর’ নামে কংক্রিটের খোল ছাড়া আর কিছুই নেই। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখে জানা গেল, দোতলা বাড়িটায় রয়েছেন মোটে তিনজন কর্মী। তাদের একজন উদ্যানপালন সহায়ক, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং অপরজন নিরাপত্তা কর্মী। তাঁরা জানালেন, বছর তিনেক আগে পর্যন্ত মহকুমা উদ্যান পালন আধিকারিকের চেয়ারভর্তি ছিল। কিন্তু তারপর সেই ফাঁকা জায়গা আর ভরাট হয়নি। জেলা উদ্যানপালন দপ্তর থেকে কোনওমতে সামাল দেওয়া হচ্ছে সমস্ত কাজ। আর এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন ব্লকের হাজার হাজার ফুল চাষি। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চাষের বিভিন্ন সমস্যা, রোগের কারণে ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়া, পোকামাকড়ের উপদ্রব সহ নানা সমস্যা নিয়ে তাঁরা যাবেন কার কাছে? এই সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন তো জেলা অফিসে যাওয়া সম্ভব নয়। রানাঘাট ২ ব্লকের দত্তপুলিয়া, পূর্ণনগর, বহিরগাছি, পুরাতন চাপড়া থেকে রানাঘাট ১ ব্লকের আনুলিয়া, তারাপুর, পায়রাডাঙ্গা সহ একাধিক জায়গার মূল অর্থনীতি ফুল চাষের উপর নির্ভরশীল হলেও তা ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক হৃষিকেশ খাড়া। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত শূন্য পদে নিয়োগের চেষ্টা চলছে। আমরা মানুষকে পরিষেবা দিতে তৎপর। জেলা অফিস থেকেও সমস্ত পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।