• আবার দুই বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন নিয়ে আশাবাদী কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
    বর্তমান | ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: দুই বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতির পুনরায় মেলবন্ধন নিয়ে আশাবাদী কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। শনিবার হলদিয়ায় বিশ্ব বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি উৎসবে এই আশার কথা ব্যক্ত করেন তিনি। হলদিয়ার সাহিত্য উৎসবে বাংলাদেশের কবি সাহিত্যিকরা আসতেন, সংস্কৃতির আদানপ্রদান হতো। ওপার বাংলায় অশান্তির জন্য এবার কবিরা আসতে পারেননি। শীর্ষেন্দুবাবু বলেন, সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। আশা করি একদিন স্বাভাবিক হবে। উৎসবের দ্বিতীয় দিনের সাহিত্যসভার মধ্যমণি ছিলেন শীর্ষেন্দুবাবু। নিজের সাহিত্য জীবনের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ছোটবেলায় আজকের মতো এত প্রাপ্তি ছিল না। কলের গান বা গ্রামোফোন ছিল একমাত্র বিস্ময়ের। কীভাবে চোঙা দিয়ে গান বেরত, অবাক হয়ে দেখতাম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন জীবন আমূল পাল্টে গিয়েছে। মানুষের জীবনের পরিবর্তন হতে থাকে এভাবে। তাঁর আক্ষেপ, সমাজে মেধার চাষ হচ্ছে, কিন্তু মানবিকতার চাষ কোথায়? 


    শীর্ষেন্দুবাবুর উপলব্ধি, আগামী দিনে যারা সমাজ শাসন করবে, তারা শুধু মেধাবিশিষ্ট, সহৃদয়ের অধিকারী নয়, এটাই ভয়ের কারণ। মেধা আমাদের প্রয়োজন, কিন্তু মেধার যদি সর্বংসহা গুণ না থাকে, মেধার সঙ্গে যদি হৃদয় না থাকে, মানবিকসত্তা যুক্ত না হয়, তাহলে সেই মেধা বৃথা। তিনি আবেগবিহ্বল হয়ে বলেন, সারা জীবন ধরে আমি পর্যবেক্ষণ করেছি, এটা ছাড়া আমার কিছু করার ছিল না। আমার বুদ্ধি নেই, তবে আজীবন দু’চোখ মেলে সমাজের মানুষকে দেখেছি, আমি সবাইকে ভালোবাসতে চাই। শীর্ষেন্দুবাবুর কথা মোহিত হয়ে শুনছিলেন সাহিত্য অনুরাগী প্রায় এক হাজার শ্রোতা। 


    এবার সাহিত্য উৎসবে চার শতাধিক কবি সাহিত্যিক ও শিল্পী উপস্থিত হয়েছেন। সকাল থেকে কবিতা, ছোটগল্প পাঠে জমে ওঠে সাহিত্যের আসর। বাংলা কবিতার সঙ্গে বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষার কবিতা পাঠ হয়। এদিন উৎসবের সাধারণ সম্পাদক কবি শ্যামলকান্তি দাশের কবিতার বই ‘অন্য মানুষ’ সহ একাধিক কবিতার বই প্রকাশ করেন শীর্ষেন্দুবাবু। শীর্ষেন্দুবাবুর প্রতিকৃতি এঁকে তাঁকে উপহার দেন শিল্পী যুগল বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও কুহেলি শিকদার।


    উৎসবের দ্বিতীয় দিনের সেমিনারের বিষয় ছিল ‘আইকেয়ার: পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান।’ এবিষয়ে আইকেয়ারের হলদিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনীদের চন্দ্র ও সূর্য অভিযানে কৃতী বিজ্ঞানী হিসেবে অংশগ্রহণের বিষয় তুলে ধরেন প্রাক্তন সাংসদ ও আইকেয়ারের চেয়ারম্যান লক্ষ্মণ শেঠ। তিনি বলেন, এইচআইটির কৃতীদের হাত ধরেই আজ হলদিয়ার নাম বিশ্বের কাছে পৌঁছেছে। এটা শুধু হলদিয়া নয়, রাজ্যেরও গর্বের বিষয়। আইকেয়ারের সম্পাদক আশিস লাহিড়ি বলেন, বাম আমলে অনেক বাধার মুখে পড়ে লক্ষ্মণ শেঠের উদ্যোগে রাজ্যের প্রথম বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে ওঠে। তিনি এধরনের কলেজ গড়ে তোলার জন্য প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করে জ্যোতি বসুকে প্রস্তাব দেন। এরপর এক এক করে ১৩টি কলেজ গড়ে উঠেছে। এখন রাজ্যের বাইরে থেকে এমনকী, বিদেশ থেকে বহু পড়ুয়া হলদিয়া আসে। এরফলে রাজ্যের অর্থনৈতিক লাভ হচ্ছে। এদিন সন্ধ্যায় আইকেয়ার কালচারাল অ্যাকাডেমির সলিল চৌধুরী স্মরণ অনুষ্ঠান মাতিয়ে দেয় দর্শকদের। স্পর্শিতা পণ্ডাশেঠের নেতৃত্বে প্রায় ২০জন শিল্পী সলিল চৌধুরীর বিখ্যাত গানগুলি পরিবেশন করেন। রাতে লোকগান পরিবেশন করে ডিঙ্গা লোকগানের দল।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)