• ফসল বাঁচাতে নয়া কৌশল, কামাল হাতির মলের
    এই সময় | ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • অর্ঘ্য বিশ্বাস, ময়নাগুড়ি

    মাঠে ফলেছে কচি বাঁধাকপি। নধর, সবুজ। কোথাও ফুটে আছে ফুলকপি। আছে বেগুন, মূলো। এ সব লোভনীয় আনাজের টানে ছুটে আসছে হাতির দল। এতে সর্বনাশ হচ্ছে কৃষকের। হাতির হাত থেকে ফসল বাঁচাতে ময়নাগুড়ির একাংশে কৃষকরা অভিনব কৌশল নিয়েছেন।

    হাতি–মানুষ সহাবস্থানের নজির রয়েছে জলঢাকা নদী ঘেঁষা এই এলাকায়। গত কয়েক বছর ধরে এলাকায় হাতির আনাগোনা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেড়েছে। নদীর অন্য প্রান্তে রয়েছে জলপাইগুড়ি বন বিভাগের নাথুয়া রেঞ্জের বনাঞ্চল। তার বেশ কিছুটা দূরে গোরুমারার জঙ্গল। এ সব জায়গা থেকে সন্ধে গড়াতেই হাতি চলে আসে গ্রামে। খাবারের খোঁজে দিনে–দুপুরেও বেরিয়ে আসে। গত কয়েক বছরে এই প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে। জলঢাকার চরে আনাজের স্বাদ নিতেই হাতির আনাগোনা বাড়ছে।

    এতে সমস্যায় পড়েছেন ময়নাগুড়ি ব্লকের রামশাই, আমগুড়ি, চূড়াভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক হাজার কৃষিজীবী। এই হানা ঠেকাতে ঝাড়ুয়াপাড়া এলাকায় অভিনব কৌশল নিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয় কৃষক কৃষ্ণ রায়, রমেশ বর্মনের বক্তব্য, ‘নদী গতিপথ পরিবর্তন করে ঘুরপথে চলে আসায় এক প্রান্তে চড়া পড়েছে। সেই মাটিতে ফলন ভালো হওয়ায় আমরা চাষ করি। ফসল ভালো হওয়ায় হাতির আগমনও বেড়েছে। তাই নয়া কৌশল নেওয়া হয়েছে।’

    কী সেই কৌশল? স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ জমিতে পড়ে থাকা হাতির মল সংগ্রহ করে আশেপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রাখতে শুরু করেছেন। এখানকার কৃষক বিনতা রায় বলেন, ‘হাতির মল সংগ্রহ করে জলে মিশিয়ে সেই জল চাষের জমির ধারে ছিটিয়ে দিচ্ছি। এতে কমেছে হাতির হানা।’ আর এক মহিলা চাষি জয়মতি বর্মনের কথায়, ‘এই কৌশল কাজে এসেছে। হাতি জমির কাছে এসে শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে থাকছে কিছুক্ষণ। জমির ভিতর আসছে না।’ প্রায় মাসখানেক হাতি এই এলাকার আশপাশে এলেও ফসল খাচ্ছে না। এতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন কৃষকরা।

    কেউ ভাবছেন এটা মলের কামাল, কারও মতে দৈবের নির্দেশ। প্রবীণ বাসিন্দা ফুলেশ্বরী রায়ের কথায়, ‘হাতিকে আমরা মহাকাল হিসেবে পুজো করি যাতে ফসল রক্ষা পায়। সেই পুজো কিছু দিন আগে হয়েছে জলঢাকা নদীর ঘাটে৷ এখনও পর্যন্ত বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আক্রমণ দূরের কথা, হাতি কাউকে তাড়াও করেনি।’ তবে জলপাইগুড়ি তথা গোরুমারার প্রাক্তন বনাধিকারিক বিমল দেবনাথের ব্যাখ্যা, ‘এই ধরনের ঘটনা আগে সামনে আসেনি। হাতি বুদ্ধিমান প্রাণী, সব সময়ে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। ওরা নিজের মলকে এড়িয়ে চলে। তাই হয়তো মলের ঘ্রাণ পাওয়া মাত্রই দূরত্ব বজায় রাখছে। চাষিরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে এ ভাবে সমাধান খুঁজে পেলে সেটা ভালো ইঙ্গিত।’

    জলপাইগুড়ি জেলা কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী বিপ্লব দাস বলেন, ‘হাতির মল সার হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। চাষিরা এই পদ্ধতির মাধ্যমে যদি হাতির হানা ঠেকিয়ে জমির উর্বরতা বাড়াতে পারেন, সেটা ভালো পদক্ষেপ।’ হস্তিবিশারদ পার্বতী বড়ুয়ার মতে, ‘এই ধরনের ঘটনা বিরল হলেও বিভিন্ন জঙ্গল ঘেঁষা এলাকায় বাসিন্দারা হাতির হানা রুখতে নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। আগামীতে এ ভাবেই মানুষ ও হাতির সহাবস্থান ছাড়া উপায় নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)