কৌশিক দে, মালদা
এক বছর আগের কথা। বড় আদর করে উদ্বোধনের সময়ে নাম রাখা হয়েছিল গৌড়কন্যা বাস টার্মিনাস। কথা ছিল, মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হওয়া এই টার্মিনাসে জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে আসা সরকারি, বেসরকারি শতাধিক বাস যাতায়াত করবে। সে জন্য সীমানা পাঁচিল , ভূগর্ভস্থ পরিশ্রুত পানীয় জল, পার্ক, আলোর ব্যবস্থা, সব কিছু করা হবে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বাস এসে দাঁড়ায় ঠিকই, বাকি পরিকাঠামোর এখনও গড়ে ওঠেনি।
২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মালদায় ঘটা করে উদ্বোধন হয় গৌড়কন্যা বাস টার্মিনাসের। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১০০ বিঘা জমির উপরে এই বাস টার্মিনাসটি তৈরি করতে রাজ্য সরকারের খরচ হয় প্রায় কুড়ি কোটি টাকা। ওই টাকায় ঝাঁ চকচকে বাসস্ট্যান্ড গড়ে উঠবে, এমনটাই আশা করেছিলেন জেলার মানুষ। ইংরেজবাজার শহরের যানজট কমাতে শহরের অদূরে বাস টার্মিনাসটি গড়ে তোলা হয়। বাসস্ট্যান্ডে যত্রতত্র জঞ্জাল, পরিশ্রুত পানীয় জল মিলছে না বলে অভিযোগ। পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের অভাবেও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। আর সীমানা পাঁচিলের তো কোন বালাই নেই।
প্রায় প্রতিদিন গৌড়কন্যা থেকে বাস ধরেন ইংরেজবাজারের সাবিনা বেগম এবং কোহিনুর বিবি। তাঁদের কথায়, ‘দিনে সরকারি বা বেসরকারি বাস ধরতে গেলেও রাতে যাওয়ার সাহস হয় না। সূর্য ডুবলেই অন্ধকারে ঢেকে যায় এলাকা। নিরাপত্তার অভাব বোধ করি।’ বেসরকারি বাসচালক দীপক মহলদার ও বিকাশ দাস বলেন, ‘এই টার্মিনাসে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত আলোর অভাব রয়েছে। শৌচাগারও দুর্গন্ধে ভরা। যত্রতত্র আবর্জনা। ফলে যাত্রীরা রাস্তা থেকে বাসে ওঠেন। বাস টার্মিনাসের ভিতরে আসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না অনেকেই।’
মালদা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজল রায় বলেন, ‘গৌড়কন্যা বাস টার্মিনাস থেকে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৫০০ বাস বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। মালদা থেকে কলকাতা ,শিলিগুড়ি, বহরমপুর–সহ বিভিন্ন দূরপাল্লায় যাতায়াত করার ক্ষেত্রে এই বাস টার্মিনাসেই গাড়ি ধরতে আসেন বহু মানুষ। এ ছাড়াও জেলার পকেট রুটগুলোতেও এই টার্মিনাস থেকেই বাস চলাচল করে। কিন্তু যে সৌন্দর্যায়নের কথা বলা হয়েছিল, তা এখনো গড়ে ওঠেনি। স্বাভাবিক কারণে যাত্রীরা অভিযোগ করবেই।’ জেলার সিটু নেতা কৌশিক মিশ্র বলেন, ‘আমরা প্রথমেই বলেছিলাম উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে না তুলেই গৌড়কন্যা বাস টার্মিনাস চালু করা ঠিক হয়নি। আমরা প্রথম থেকেই দাবি করেছিলাম যাত্রী পরিষেবা, পরিবহণ শ্রমিক যাঁরা গাড়ি চালান তাঁদের পরিষেবা, বিশ্রামের জায়গা, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সেগুলো না তৈরি করেই বাস টার্মিনাস উদ্বোধন করা হয়েছিল।’
তৃণমূল পরিচালিত মালদা জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিদ্যুৎ বসাক বলেন, ‘পানীয় জলের সমস্যার কথা চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।’ ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী জানিয়েছেন, পাইপ লাইন না পৌঁছনোয় জলের সমস্যা রয়েছে। তবে ওয়াটার ট্যাঙ্ক বসানো হবে। বাকি সমস্ত পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। সীমানা পাঁচিলের বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখছে।