আরজি করের আন্দোলনকে জোরদার করতে জুনিয়র ডাক্তারদের ট্রাস্ট তৈরি করে টাকা তোলার জন্য ওই হাসপাতালের হস্টেলের ঠিকানা ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল আগেই। এ বার তার সঙ্গেই নতুন করে চার জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে আন্দোলনের জন্য ক্রাউড ফান্ডিং অর্থাৎ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া এবং সেই টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ দায়ের করা হলো বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায়।
গত সপ্তাহে জমা পড়া সেই অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, আন্দোলনের নামে এ ভাবে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। সেই টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে আশঙ্কা করে তোলা হয়েছে তদন্তের দাবি। যদিও এ ধরনের অভিযোগ তুলে আরজি কর নিয়ে চিকিৎসকদের আন্দোলনকে আখেরে দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছে নাগরিক সমাজের একাংশ। আবার অভিযোগের ধরন দেখে কলকাতা হাইকোর্টের কয়েক জন আইনজীবীর প্রশ্ন, এ রকম অভিযোগের তদন্ত কি পুলিশ আদৌ করতে পারে?
বিধাননগর কমিশনারেটে অভিযোগ দায়ের করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি চার জুনিয়র চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করেছে। আরজি করের এক তরুণী চিকিৎসক এই আন্দোলন চলাকালীন ঝাড়খণ্ডে তাঁর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে কলকাতার একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন বলে জানানো হয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টে কয়েক লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। একই ভাবে আরজি করের এক চিকিৎসক, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক ও জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের এক কর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ, তাঁরা নিজেদের নামে অন্তত তিনটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলেছেন এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা টাকা সেখানে নিয়েছেন। সেই সব অ্যাকাউন্টে কোথা থেকে কত টাকা জমা পড়েছে, সে ব্যাপারে সম্প্রতি কিছু তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। আবার সেই সব অ্যাকাউন্ট থেকে কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, তারও কিছু হিসেব নিয়ে চলছে জল্পনা। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আরও অভিযোগ, তারা ডক্টর্র ফ্রন্টের ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে টাকা দিলেও সেখান থেকে টাকা পাওয়ার প্রাপ্তি স্বীকারের কোনও প্রমাণ মেলেনি। ফলে আন্দোলনের জন্য তোলা টাকার আদৌ অডিট হচ্ছে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ পেলে আপাতত তা নিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। যদিও কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক আইনজীবী এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই বলে দাবি করেছেন। আইনজীবী সৌম্যজিৎ দাস মহাপাত্রের বক্তব্য, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এমন টাকা তোলায় আইনত কোনও বাধা নেই। তা ছাড়া, সেই টাকা যে নয়ছয় হয়েছে, তার প্রমাণ কোথায়? এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কিছু করতে গেলে তাদেরই অস্বস্তি বাড়তে পারে। কারণ এ ক্ষেত্রে যদি সামান্য কিছু করার থাকে, সেটা একমাত্র করতে পারে আয়কর দপ্তর। আর অডিট হচ্ছে কি না, সেই বিষয়টি তো দেখা যাবে অথবর্ষ পার করলে। তার আগে নয়। যদিও আইনজীবীদের আর একটি অংশের অভিমত, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে নেওয়া টাকা কী ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান হলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে।