• লড়াই বাকি, হাল ছাড়তে চান না তরুণীর বাবা-মা
    এই সময় | ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: ৯ অগস্টের যে ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ ছাপিয়ে গোটা দেশ এবং বিশ্বকেও, সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলো শনিবার। এ দিন রায় ঘোষণার পরে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক যখন এজলাস ছাড়ছেন, তখনও সবার নজর ছিল আরজি করের নির্যাতিতার বাবা–মায়ের দিকে। বিচারকের উদ্দেশে ছলছল চোখে হাতজোড় করে নির্যাতিতার বাবাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার উপর যে আস্থা রেখেছিলাম, তার পূর্ণ মর্যাদা রেখেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’

    আগামিকাল, সোমবার দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণা করবে আদালত। কিন্তু এখানেই কি ইতি আরজি কর মামলার? বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, মূল অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলেও তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই নিজেই জানিয়েছে, এই মামলায় তারা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেবে। ফলে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। আবার নির্যাতিতার পরিবারও এখনও পর্যন্ত তদন্তে যা উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে বেশকিছু প্রশ্ন তুলেছে। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের তরফেও তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে ২০ দফা প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

    এ দিন রায় ঘোষণার পরে বিচারক, প্রতিবাদী, সহানুভূতিশীল সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘আমাদের যা গিয়েছে, তা আমাদেরই গিয়েছে। বিচারককে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। প্রতিবাদী মানুষকেও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁরা নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। আমরা দোষীর সর্বোচ্চ সাজা, মানে মৃত্যুদণ্ডই চাই।’ তবে নির্যাতিতার বাবা–মার স্পষ্ট কথা, এই ঘটনার পিছনে শুধু সঞ্জয় নয়, আরও অনেকেই যুক্ত বলে তাঁরা মনে করেন। সোমবার সঞ্জয়ের সাজা ঘোষণা হলে তাঁরা অপেক্ষা করবেন, তদন্তে বাকি দোষীদের ধরা পড়ার জন্য।নির্যাতিতার ন্যায়বিচার চেয়ে গত অগস্ট মাস থেকেই রাজপথ বার বার উত্তাল হয়েছে নাগরিক মহলের প্রতিবাদে।

    ডাক্তার, জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছেন ছাত্রছাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ, সেলিব্রিটিরাও। ১৪ অগস্ট রাত দখলের প্রথম কারিগর গবেষক রিমঝিম সিনহার কথায়, ‘এই গোটা ঘটনাটি ঘটেছে একটা সিস্টেমেটিক ফেলিওরের কারণে। তাই শুধু সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করলেই এই ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হবে না। তার জন্য নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’ আর জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদারের কথায়, ‘আরও েক আর কারা জড়িত, সেটাও সামনে আনতে হবে!’

    এ দিন আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘এই রায় প্রমাণ করল যে, কলকাতা পুলিশের তদন্ত এবং গ্রেপ্তারি— সার্বিক অনুসন্ধানের মুখ একেবারে সঠিক ছিল। যাঁরা বলেছিলেন, উই ওয়ান্ট সিবিআই, সেই সিবিআইয়ের তদন্তেও কলকাতা পুলিশের তদন্তই মান্যতা পেয়েছে।’ বিরোধীরা অবশ্য এ দিনও রাজ্যের পুলিশ–প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় তুলেছে।

    বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, ‘এটা আংশিক বিচার। শুরুটা ভালোই হয়েছে, তবে আরও অনেকটা এগোতে হবে। বিচার সম্পূর্ণ করতে হবে।’ তাঁরও দাবি, এই ঘটনা একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। একাধিক লোক জড়িত থাকতে পারে। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং কলকাতা পুলিশের তৎকালীন শীর্ষকর্তাকেও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

    কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর অবশ্য অভিযোগ, ‘এই মামলায় পুলিশ যেমন কিছু করেনি, তেমনই সিবিআই–ও গা ভাসিয়ে উদাসীনতার সঙ্গে তদন্ত করেছে।’ তিনিও মনে করেন, একা সঞ্জয়ের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়।সিবিআইয়ের তদন্তের প্রেক্ষিতে ৩৫ দফা প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ ইতিমধ্যেই হয়েছেন নির্যাতিতার বাবা–মা। এ দিন জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফেও ২০টি প্রশ্ন তোলা হয়েছে তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে।

    যেমন— সে দিনের অকুস্থল যদি আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম হয়, তা হলে সেখানে কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন কেন পাওয়া গেল না? কেন প্রথমে নির্যাতিতার পরিবারকে আত্মহত্যার কথা বলা হলো? সব জেনেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন এফআইআর করলেন না? নির্যাতিতার দেহ সৎকারের জন্য পুলিশের এতো তাড়াহুড়ো ছিল কেন? এই প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখে আন্দোলন আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেন তাঁরা। প্রশ্ন এখনও অনেক। তবে এখনই হতাশ হতে রাজি নয় নিহত তরুণী চিকিৎসকের পরিবার। নির্যাতিতার মা এ দিন আদালতের বাইরে বলেন, ‘তদন্ত এখনও চলছে। আরও দোষী ধরা পড়বে। কারও হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)