কৌশিক সেন, রায়গঞ্জ
নার্সারির পড়ুয়া ফারিন রোজ় বুঝতেই পারছে না শনিবার আগাম কিছু না-জানিয়ে স্কুলে আসার পরেই কেন ছুটি দিয়ে দেওয়া হলো! একই প্রশ্ন তার স্কুলের বাকিদেরও। এমনিতেই শনিবার ক্লাস কম থাকে। খেলার সময় অনেক। ফলে শনিবার স্কুলে আসার তাগিদটাও বেশি থাকে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু স্কুলের সামনে গাড়ি থেকে নামতেই ‘স্যর’ জানিয়ে দেন, ‘আজ স্কুল হবে না।’ কারণও কিছু জানানো হয়নি। একটু পরেই ফের স্কুলভ্যানেই বাড়ি ফিরেছে রোজ় ও অন্য পড়ুয়ারা।
রোজ়ের কথায়, ‘এ দিন স্কুলের সামনে ভ্যান থেকে নামতেই চারপাশের পরিবেশটা একটু অন্যরকম লাগছিল। বাবুল আঙ্কেলের দোকান খোলা ছিল। কিন্তু অন্য দিনের মতো ভিড় ছিল না। স্কুল থেকে বেশ খানিকটা দূরে লোকজন জটলা করে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের স্কুলের দিকেই আঙুল তুলে ওরা কী সব বলাবলি করছিল।’
স্কুলের অন্য পড়ুয়ারা জানিয়েছে, স্কুলের পাশেই শেরওয়ানি নদী। তার পাড়ে অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। একটা হলুদ ফিতে দিয়ে নদীর ব্রিজের কাছে এবং নদীর পাশে বেশ কয়েকটি জায়গা ঘেরা ছিল। ব্রিজে কাউকেই দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছিল না। কিছু না-বুঝেই তারা স্কুলে ঢুকে পড়ে। তারপরেই স্কুলের শিক্ষকেরা তাদের নির্দেশ দেন, ‘নদীর দিকে পিছন ফিরে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করো।’ এই কথাতেও পড়ুয়ারা বেশ অবাক হয়। তাদের একজন বলে, ‘অন্যদিন স্কুলের মাঠ থেকে পাশের চাষের জমি ও নদীর দিকে তাকিয়ে দেখি। কেউ নিষেধ করে না। আজ দেখলাম সবই কেমন উল্টো রকম। কিছুক্ষণ পরে ভ্যান ফিরে আসে। আমরাও বাড়ি ফিরি। ফেরার সময়ে ভ্যানকাকুর মুখে একটা নতুন শব্দ শুনলাম— এনকাউন্টার। কথাটার মানে জানি না। বাড়িতে গিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করব।’
স্কুলের আর এক ছাত্র আবেদ কাদরি বলে, ‘শনিবার স্কুলে খেলব বলে বাড়ি থেকে ক্রিকেট ব্যাট এনেছিলাম। কিন্তু স্কুল তো ছুটি হয়ে গেল। কারণ বুঝতে পারলাম না। এর আগে ছুটি থাকলে আমাদের ডায়েরিতে লিখে দেওয়া হতো। আজ যে কী হলো, কে জানে! তবে স্কুলের চারপাশে, চাষের জমিতে এত পুলিশ কোনওদিন দেখিনি।’
ইসলামপুরের গোয়ালপোখর থানা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কিচকটোলা এলাকায় শেরওয়ানি নদীর পাশেই শামা পাবলিক স্কুল। সেখানে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। প্রায় সাড়ে তিনশো ছাত্রছাত্রী রয়েছে। শনিবার ভোররাতে ওই স্কুলের পাশের চাষের জমিতে পুলিশের গুলিতে মারা যায় সাজ্জাক আলম নামে ফেরার এক বিচারাধীন বন্দি। তারপর থেকেই গোটা এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছিল। এ দিনের ঘটনার জেরে ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয় ওই স্কুলেও।
স্কুলের শিক্ষক মহম্মদ হায়দার বলেন, ‘আমরা চাইনি, এ দিনের বিষয়টি নিয়ে শিশুদের মনে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক। সেই কারণেই আমরা তড়িঘড়ি স্কুল ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আশা করি, রবিবারের মধ্যেই পুলিশের পাহারা, ব্যারিকেড উঠে যাবে। সোমবার বাচ্চারা স্কুলে এসে তাদের চেনা পরিবেশ ফিরে পাবে।’