এই সময়, রায়গঞ্জ: গুলি, গুলি এবং গুলি। শনিবার ভোরে সাজ্জাক আলমকে এনকাউন্টারের সময়ে পুলিশ তিন রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। পিঠ, বুক ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে সাজ্জাককে নিয়ে আসা হয় লোধন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিছুক্ষণ পরে সেখানেই সে মারা যায়।
এ দিনের ঘটনার পরে ‘পুলিশের এনকাউন্টার’ যেন টক অফ দ্য টাউন হয়ে গিয়েছে। তবে এই প্রথম নয়, চব্বিশ বছর আগেও এনকাউন্টারের সাক্ষী থেকেছে রায়গঞ্জ। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে রায়গঞ্জ শহরের বন্দর এলাকায় শিবপ্রসাদ চৌধুরী ও রামকৃষ্ণ সাহা নামে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ দুই ‘ক্রিমিনাল’কে এনকাউন্টার করে পুলিশ।
রায়গঞ্জ শহরের বন্দর, কুমারডাঙি, বীরনগর, দেবীনগর এলাকায় একের পর এক ‘ক্রাইম’ শুরু করে শিবপ্রসাদ ও তার দল। ডাকাতি, ছিনতাই, তোলাবাজি, ধর্ষণ— অভিযোগের তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। এলাকায় ত্রাস ছিল শিবপ্রসাদ ও তার গ্যাং। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যার পরে বন্দর বা তার আশপাশের এলাকায় কেউ যেতেন না। পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দর এলাকায় পুলিশ একটি ফাঁড়িও চালু করে। কিন্তু তাতেও আতঙ্ক কমেনি। শিবপ্রসাদের প্রতিপত্তি এতটাই বাড়তে থাকে যে, বন্দর এলাকার ওই ডেরায় বসে সে শহরের ঠিকাদারির নিয়ন্ত্রণও নিজের মুঠোবন্দি করে ফেলে।
বন্দর এলাকার এক বাসিন্দার আজও স্পষ্ট মনে আছে, ‘সালটা ২০০০। গরমকালের দুপুরবেলা। বাজার সংলগ্ন বাড়িতে শিবপ্রসাদ ভাতঘুম দিচ্ছিল। আচমকা তার বাড়ির সামনে কয়েকটি রাস্তার কুকুর তারস্বরে চিৎকার শুরু করে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় শিবপ্রসাদ লুঙ্গি পরে খালি গায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। কুকুরদের লক্ষ্য করে পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায়। দু’টি কুকুর মারা যায়। বাকিরা পালিয়ে যায়। ফের স্তব্ধতা ফিরে আসায় শিবপ্রসাদ নির্বিকার ভাবে ফের ঘুমোতে চলে যায়।’ যাওয়ার আগে শিবপ্রসাদ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দলের অনুগামীদের নিদান দেয়, ‘এরপর থেকে কুকুর ডাকলে এই ট্রিটমেন্টটাই করবি।’
পুলিশ রাতে বেশ কয়েকবার বিরাট ফোর্স নিয়ে বন্দর এলাকায় শিবপ্রসাদকে ধরতে অভিযান চালিয়েও ব্যর্থহয়। শোনা যায়, শিবপ্রসাদ প্রতি রাতে নিজের পছন্দমতো যে কোনও বাড়িতে ঢুকে দলবল নিয়ে থাকত। প্রতি রাতেই সে আস্তানা বদলে ফেলত। ২০০১ সালে পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পায়, বন্দর বাজারের কাছে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে শিবপ্রসাদ লুকিয়ে আছে।
তারপরেই পুলিশ ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে। গাড়ি না-নিয়ে রায়গঞ্জ থানার কয়েকজন অফিসার সাদা পোশাকে আলাদা আলাদা রাস্তা দিয়ে ওই বাড়ির সামনে পৌঁছয়। দরজা ঠেলে ঢুকতেই শিবপ্রসাদ ও তার সঙ্গী রামকৃষ্ণ সাহা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। শিবপ্রসাদ ও রামকৃষ্ণ দু’জনেই ঘটনাস্থলে মারা যায়।
ওই ঘটনার পরে শিবপ্রসাদের দলবল রায়গঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায়। তৎকালীন আইসি জ্যোতিবিকাশ দে তাঁর মেয়েকে নিয়ে পুলিশ কোয়ার্টার থেকে বেরনোর সময়ে বিক্ষোভকারীরা তাঁদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। আইসি-র গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। বাধ্য হয়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রায় ২০-২৫ রাউন্ড গুলি চালায়।