এই সময়: পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মানবিক, কিন্তু পুলিশের উপরে বারবার গুলি চালিয়ে যদি কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন পুলিশকে বাধ্য হয়ে গুলি চালাতে হয়— এমনটাই দাবি রাজ্য পুলিশের কর্তা থেকে শুরু করে রাজ্যের শাসকদলের। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন–শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম জানান, উত্তর দিনাজপুরে গোয়ালপোখরের দুষ্কৃতী সাজ্জাক আলম পুলিশকে গুলি চালিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলেই পুলিশকে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালাতে হয়েছে।
পুলিশি এনকাউন্টারে এই অপরাধীর মৃত্যু নিয়ে এ দিন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও বলেন, ‘পুলিশ অত্যন্ত সঠিক কাজ করেছে। পুলিশকে গুলি করে যদি কোনও সমাজবিরোধী–অপরাধী পালিয়ে যায়, পুলিশ যদি জখম হয়, পরে সে আবার পালিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের উপরে হামলা করে, সেখানে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। মারা গিয়েছে। মৃত্যু কেউ চায় না, কিন্তু কেউ যদি পুলিশকে বারবার গুলি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, সেখানে পুলিশ গুলি চালিয়ে সঠিক কাজ করেছে।’
রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তুলতে ছাড়েনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, গোয়ালপোখরে কোনও এনকাউন্টার হয়নি। উত্তরপ্রদেশে যে ভাবে এনকাউন্টার হয়, এটা তা নয়। তাঁর কথায়, ‘উত্তরপ্রদেশে পুলিশ ক্রিমিন্যাল–রাজকে খতম করতে এই কাজ (এনকাউন্টার) করে। এখানে অবৈধ বন্দুক একজন বন্দির কাছে পৌঁছে দিয়েছে যারা, তার একমাত্র সাক্ষী হলো এই ব্যক্তি।
যাকে পাঁচদিনে হেফাজতে রাখলে জানা যেত, কে বন্দুক দিয়েছে। কিন্তু এখানেই যাতে এই বিষয়টি ক্লোজ়ড হয়ে যায়, তাই এই খুন করা হয়েছে।’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘যে মারা গিয়েছে, সে আসামী। কিন্তু আইনের শাসনে তার বিচারের অধিকার রয়েছে। এনকাউন্টার যোগী রাজ্যে স্বীকৃত। মোদী–শাহের গুজরাটে স্বীকৃত। সংবিধানে স্বীকৃত নয়। সেটাই কি বাংলায় চালু হলো? এটা ফেক এনকাউন্টার কি না, সেই প্রশ্নও উঠবে।’
এ দিন ভবানীভবনে সাংবাদিক বৈঠকে জাভেদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তা হলে কি রাজ্য পুলিশও ‘ট্রিগার হ্যাপি’ হয়ে উঠছে? এই পুলিশকর্তার স্পষ্ট জবাব, ‘পুলিশ ট্রিগার–হ্যাপি নয়। পুলিশ প্রফেশনালি যেটা করার সেটাই করেছে। আগামী দিনেও পুলিশ সে ভাবেই চলবে। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পুলিশকে গুলি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল বলেই পুলিশকে গুলি চালাতে হয়েছে।’
তাঁর সংযোজন, ‘অতীতেও পুলিশ প্রয়োজনে এমন পদক্ষেপ করেছে। আগামী দিনে প্রফেশনালি কাজ করতে গিয়ে প্রয়োজন হলে আবারও করবে।’ কুণালও যুক্তি দিয়েছেন, যোগী রাজ্যের সঙ্গে কোনও ভাবেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তুলনা করা যায় না। তাঁর যুক্তি, ‘এটা তুলনার বিষয় নয়, আমরা হত্যাকে গর্বের সঙ্গে বলি না। কিন্তু যখন পুলিশের উপর হামলা হয়, তখন একটা লেভেলের পর পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। সেখানে পুলিশ সঠিক কাজই করেছে।’
তিনি আরও জানান, বাংলায় পুলিশ মানবিক, পুলিশ আইনের পথে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু যদি কেউ বারবার পুলিশের উপরে গুলি করে, পুলিশের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে, সেখানে পুলিশ পাল্টা গুলি চালিয়ে ঠিক করেছে। বাম আমলেও পুলিশের গুলি চালানোর অজস্র উদাহরণ রয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের।