• ধ্বংসস্তূপের চাপে কাটা গেল সব্জি বিক্রেতার পা, জখম ৬
    বর্তমান | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ভরা বাজারে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল সদ্য ঢালাই হওয়া নির্মীয়মাণ ছাদের অংশ। একটি ক্লাবের অনুমতিবিহীন তিনতলায় চলছিল সেই ঢালাইয়ের কাজ। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আহত হয়েছেন ৬ জন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একজনের পা হাঁটু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে রানাঘাটের আনুলিয়া বাজারে। আহতদের চিকিৎসার জন্য ঘটনা নিকটবর্তী রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহতদের স্থানান্তরিত করা হয় কল্যাণী জেএনএম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। কী কারণে নির্মীয়মাণ অংশটি হঠাৎ ভেঙে পড়ল, তার উত্তর খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছে দমকল। 


    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থল আনুলিয়ার জগপুর রোডের দত্তবাজার। রানাঘাট পুরসভার সীমান্ত লাগোয়া আনুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে কোর্টপাড়া ভ্রাতৃ সঙ্ঘ। দ্বিতল সেই ক্লাবের নীচের অংশে দীর্ঘদিন ধরেই বসে মাছবাজার। রয়েছে বেশকিছু সব্জিরও দোকান। রবিবার সেই ক্লাবের তিনতলায় ছাদের একটি অংশ বাঁশের ভাড়া বেঁধে ঢালাইয়ের কাজ হচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আনুমানিক বেলা পৌনে একটা নাগাদ হুড়মুড়িয়ে সেই বাঁশের ভাড়া সমেত সদ্য ঢালাইয়ের অংশটি ভেঙে পড়ে। সেই সময় নীচে বাজার চলছিল। ফলে ভেঙে পড়া অংশের নীচে চাপা পড়েন বাজারের একাধিক বিক্রেতা এবং বাজারে আসা ক্রেতা। আহতদের নাম শ্যামল বিশ্বাস, জাইরুল মণ্ডল, বিশ্বনাথ সরকার, সালমা বিবি, গোলাপ শাহু খাতুন এবং পিংকি থাপা। এদের মধ্যে শ্যামল বিশ্বাস নামে এক সব্জি বিক্রেতার ধ্বংসস্তূপের চাপে পায়ের হাঁটু থেকে নীচের অংশ আলাদা হয়ে যায়। বাকিদের মধ্যে কারও মাথা ফেটে যায়, কারও হাতে এবং পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে তাঁদের উদ্ধার করেন স্থানীয়রাই। প্রথমে চিকিৎসার জন্য তাঁদের রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে স্থানান্তরিত করা হয় কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে। 


    এদিকে, খবর পেয়ে ততক্ষণে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে রানাঘাট থানার বিশাল পুলিস বাহিনী, দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। রানাঘাট পুরসভা ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। বাজারেরই মাছ বিক্রেতা রমেন মণ্ডল বলেন, নীচে তখন আমি খদ্দের ছাড়ছিলাম। হঠাৎ মনে হল চারপাশ দুলে উঠল। মুহূর্তের মধ্যে দেখি সামনের একটা অংশ ধসে পড়ছে। ভাঙা ইটের একটা অংশ আমার মাথাতেও পড়েছে। কোনওমতে আমার প্রাণটা বাঁচলেও শ্যামলের পায়ে পুরো ঢালাইয়ের অংশটা এসে পড়েছে। আমরা তাড়াহুড়ো করে ওকে উদ্ধার করতে পারলেও পা’টা বাঁচানো যায়নি। দুর্ঘটনাস্থলের কাছে এক দোকান মালিক সৌরভ বিশ্বাস বলেন, হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ পেয়ে সামনে গিয়ে দেখি মার্কেটের প্রায় ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। এই ঘটনা আর একটু সকালের দিকে ঘটলে বহু প্রাণহানি হতে পারত। ঘটনার পর প্রতিক্রিয়ার জন্য ক্লাবের কাউকে পাওয়া যায়নি। 


    অন্যদিকে, পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, নির্মীয়মাণ ক্লাবের তিনতলা অনুমতিবিহীন। বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বলেন, আমরা খোঁজ খবর করে জেনেছি, ওই ক্লাব তিনতলা নির্মাণ বা ঢালাইয়ের জন্য অনুমতি নেয়নি। তাছাড়া পঞ্চায়েত স্তরে তিনতলা অনুমতি দেওয়া হয় না। কীভাবে তা সত্ত্বেও এই নির্মাণ করা হচ্ছিল, তা আমরা তদন্ত করে দেখব। প্রসঙ্গত, নির্মীয়মাণ ছাদের অংশ ভেঙে পড়ে অবরুদ্ধ হয়ে যায় জগপুর রোড। পুলিসের তরফে জেসিবি নামিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। যদিও শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি সম্পূর্ণ চালু হয় বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ।
  • Link to this news (বর্তমান)