• সুতাহাটার ঢেকুয়া ফারুকিয়া হাই মাদ্রাসা, শতবর্ষ উদ্‌যাপন ঘিরে উন্মাদনা
    বর্তমান | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সুতাহাটার ঢেকুয়া ফারুকিয়া হাই মাদ্রাসার শতবর্ষ উদ্‌যাপন শুরু হয়েছে। ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি চলবে মাদ্রাসার শতবর্ষ উদ্‌যাপনের প্রারম্ভিক পর্ব। ১৯২৬ সালে সুতাহাটা ব্লকের কুঁকড়াহাটির ঢেকুয়া গ্রামে এই মাদ্রাসার বীজ পোঁতা হয়। প্রথমে গড়ে ওঠে ‘খারেজি মাদ্রাসা’। স্থায়ীভাবে ধর্মীয় আলোচনার প্রাথমিক পাঠ দেওয়ার জন্যই সেদিন স্থানীয়দের উদ্যোগে ওই খারেজি মাদ্রাসা তৈরি হয়। পরবর্তীকালে সেই মাদ্রাসাই হয়ে ওঠে ওই এলাকার শিক্ষার আলোকবর্তিকা। সরকারি অনুমোদন ও অনুদান পেয়ে ছোট্ট কুঁড়েঘর থেকে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজ তৈরি হয়েছে বিশাল ভবন। এখন ঢেকুয়া ফারুকিয়া হাই মাদ্রাসা সরকার পোষিত একটি মাদ্রাসা। এখানে উচ্চ মাধ্যমিকের পঠনপাঠন হয়। দুঃস্থ এবং পিছিয়ে পড়া এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভালো রেজাল্টের জন্য মেদিনীপুর ছাড়িয়ে সারা রাজ্যে সুনাম রয়েছে এই মাদ্রাসার। 


    স্থানীয়রা বলেন, খারেজি মাদ্রাসার জন্য জমি দান করেছিলেন শেখ মরহুম হামিরুদ্দিন। পরে সেই মাদ্রাসা স্থানান্তরিত হয়। এখন যে জমিতে মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে তার জমিদাতা ছিলেন স্থানীয় হরিবল্লভপুরের মহাতাবচন্দ্র দাস, সাহাপুরের আবদুল গনি সহ আরও অনেকে। মাদ্রাসাকে আধুনিকরূপ দেওয়ার প্রাথমিক কারিগর ছিলেন আব্দুল লতিফ, আব্দুল কাদেরের মতো আরও অনেক শিক্ষানুরাগী মানুষজন। ১৯৪৫ সালে মাদ্রাসায় ক্লাস সিক্স পড়ানো শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৫৪ সালে চালু হয় ক্লাস এইট, ১৯৭৩ সালে ক্লাস টেন এবং ২০০৬ সালে ক্লাস টুয়েলভের পঠনপাঠন শুরু হয়।  এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ৭০০-র বেশি। 


    প্রাক্তন পড়ুয়া এবং ইতিহাস গবেষক আমিনুল ইসলাম বলেন, এই মাদ্রাসায় পড়েই এখন হলদিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চাকরি করছি। এলাকায় স্কুল না থাকায় ঢেকুয়ার মাদ্রাসায় একসময় হিন্দু-মুসলিম পড়ুয়ার সংখ্যা সমান সমান ছিল। এখনও বহু হিন্দু পড়ুয়া এখানে পড়াশোনা করে। এখানে সংখ্যালঘু মেয়েদের পড়াশোনার হার অনেক বেশি আধুনিক মাদ্রাসা শিক্ষার কারণে। গর্বের বিষয়, এই মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন একজন প্রধান শিক্ষিকা। এই মাদ্রাসার ইতিহাসে মাধ্যমিকস্তরে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে এক ছাত্রী কানিজ মুস্তাফা। ২০২০ সালে সে ৮০০ নম্বরের মধ্যে ৭৩৪ পেয়ে মেদিনীপুরে প্রথম হয়।  এই মাদ্রাসায় ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিকস্তরে রাজ্যে তৃতীয় হয়েছিল মুস্তাক আহমেদ। ঢেকুয়া হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা নাফিসা খাতুন, শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটির সম্পাদক মহম্মদ নূর আলম, সহ সভাপতি জাইদুল ইসলাম বেগ বলেন, মাদ্রাসার শতবর্ষ উদযাপন শুধু আনন্দ নয়, এলাকার গর্বের ব্যাপার। এজন্য তিন দিন ধরে পড়ুয়াদের নিয়ে বিতর্কসভা, নাটক, প্রাক্তনীদের সমাবর্তন, শিক্ষামূলক প্রদর্শনী, ম্যাজিক শো-র মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)