চাঁদা তুলে প্ল্যাটিনাম জুবিলির অনুষ্ঠান, পড়ুয়ার খোঁজে হন্যে শিক্ষিকারা
বর্তমান | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ৭৫ বছরের স্কুল। তাও আবার জলপাইগুড়ি শহরের বুকে। কিন্তু বিদ্যালয়ের চরম দৈন্যদশা। একে তো পড়ুয়ার সংখ্যা একশোরও কম। তার উপর স্কুলকে ঘুরে দাঁড় করানোর মতো নিজস্ব আর্থিক সামর্থ্য নেই। অধরা সরকারি অনুদানও। ফলে চাঁদা তুলে প্ল্যাটিনাম জুবিলির অনুষ্ঠান করল স্কুল কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘ বছর পর রঙেয়ের প্রলেপ পড়েছে স্কুলের বাইরের দেওয়ালে। যদিও এখনও ক্লাসরুমের ভিতরে রং করার মতো টাকা জোগাড় হয়নি। স্কুলের কয়েকটি কাঠের দরজা মেরামত হলেও পড়ে রয়েছে প্রচুর ভাঙা বেঞ্চ, টেবিল। সেসব সারিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছে বারবার আবেদন জানাচ্ছেন শিক্ষিকারা। একইসঙ্গে পড়ুয়া জোগাড় করতে মরিয়া তাঁরা। চলছে প্রচার। যদিও চলতি শিক্ষাবর্ষে এখনও পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকজনের বেশি ছাত্রী ভর্তি হয়নি। এতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ শিক্ষিকাদের।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় জলপাইগুড়ির বেগম ফয়জন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের (উচ্চ মাধ্যমিক) প্ল্যাটিনাম জুবিলি। তারপর সারাবছর ধরে নানা অনুষ্ঠান হয়েছে শহরের বোসপাড়ায় অবস্থিত এই স্কুলে। কিন্তু প্ল্যাটিনাম জুবিলির সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে ঘিরে ধরে অর্থাভাব। তারপর কার্যত চাঁদা তুলে ১৮-১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠান হল জলপাইগুড়ির আর্ট গ্যালারিতে।
স্কুলের শিক্ষিকা মিমি রায় বলেন, পড়ুয়ার ঘাটতি তো আছেই। ছাত্রী জোগাড় করতে আমাদের চেষ্টার কোনও খামতি নেই। এরআগে পড়ুয়া টানতে টোটোতে করে প্রচার করেছি। প্ল্যাটিনাম জুবিলির আগে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় স্কুলে রংয়ের প্রলেপ পড়েছে। ভাঙা দরজা সারানো গিয়েছে। এখনও অনেক কাজ বাকি। টাকার অভাবে ক্লাসরুমের ভিতর রং করাতে পারিনি। প্রচুর ভাঙা চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ পড়ে রয়েছে। সেগুলি মেরামত করার মতো অর্থ নেই। কার্যত চাঁদা তুলে প্ল্যাটিনাম জুবিলির অনুষ্ঠান করতে হল।
এবছরও যে স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়, তা স্বীকার করে নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। মিমি রায় বলেন, সবমিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা একশোর কম। চলতি শিক্ষাবর্ষে এখনও পর্যন্ত ৪-৫ জন ছাত্রী পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। যাতে ছাত্রী পাওয়া যায়, সেজন্য প্রাইমারি স্কুলগুলির কাছে আবেদন রেখেছি। প্ল্যাটিনাম জুবিলির অনুষ্ঠান মিটলেই ছাত্রী খুঁজতে বের হব।
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে স্কুলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর শিক্ষিকারা। তাঁরা বলেন, ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৭.৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করা ছাত্রী খুবই গরিব পরিবারের মেয়ে মামনি দাস এখন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে। নিজস্ব চিত্র।