সিসি ছাড়াই ফ্ল্যাট বিক্রি, বছরে ১০০ কোটি রাজস্ব ক্ষতি রাজ্যে
বর্তমান | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
প্রীতেশ বসু ও বিশ্বজিৎ মাইতি, কলকাতা ও বরানগর: শহরাঞ্চলে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বহুতল আবাসন। ফ্ল্যাট সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তা বিক্রি করে মোটা টাকা পকেটস্থ করছেন প্রোমোটার। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা ফ্ল্যাটের চাবি হাতে পেলেও বহু ক্ষেত্রে সিসি’র (কমপ্লিশন সার্টিফিকেট) কোনও বালাই থাকছে না। অথচ, ফ্ল্যাট হস্তান্তরের আগে পুরসভা থেকে সিসি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কোনও ফ্ল্যাটের সিসি না থাকলে নির্মাণের গুণমান, সুরক্ষা ইত্যাদি নিয়ে সংশয় থাকেই। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের। কারণ, সিসি না থাকলে ফ্ল্যাটের মিউটেশন হয় না। আর মিউটেশন না থাকলে সেই ফ্ল্যাটকে সম্পত্তি করের আওতায় আনা যায় না। এমনকী, বহু ক্ষেত্রে স্রেফ একটি স্ট্যাম্প পেপারে সইসাবুদ করে ফ্ল্যাট বেচে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের কর্তাদের প্রাথমিক হিসেব, এভাবে অন্তত বছরে ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের। কলকাতা পুরসভাকে অবশ্য এই হিসেবের মধ্যে ধরা হয়নি। ফ্ল্যাটের সিসি এবং মিউটেশন না থাকায় ফাঁপরে পড়ছেন ক্রেতারাও। কারণ, পুরসভার বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা (যেমন পানীয় জল, নিকাশি সংযোগ ইত্যাদি) পাওয়ার ক্ষেত্রে পদে পদে হোঁচট খেতে হচ্ছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে নগরোন্নয়ন দপ্তর রাজ্যের সমস্ত পুরসভাকে চিঠি দিয়ে বলেছে, এই ধরনের অসাধু প্রোমোটার ও ডেভেলপারদের নোটিস ধরানোর পাশাপাশি জরিমানাও করতে হবে। সূত্রের খবর, গত ১৩ জানুয়ারি রাজ্যের সমস্ত পুরসভার চেয়ারম্যান ও এগজিকিউটিভ অফিসারদের চিঠি পাঠিয়ে একথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই চিঠি পৌঁছনোর পরই ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে কলকাতা লাগোয়া বিভিন্ন পুরসভায়। কারণ, এসব এলাকায় বেআইনি বহুতল অসংখ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আধিকারিক জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরসভা ও কাউন্সিলারদের একাংশের মদতেই অনুমোদিত বিল্ডিং প্ল্যানের বাইরে গিয়ে নির্মাণ হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে প্ল্যান বা পুর অনুমোদনের তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। যেমন, দক্ষিণ দমদমের এক কাউন্সিলার এভাবে রাতারাতি একটি অনুষ্ঠানবাড়ি তুলে ফেলেছেন! এসব নির্মাণের সিসি জোগাড় করতে গেলে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়। বহু প্রোমোটার তা না করে কাউন্সিলার বা প্রভাবশালীদের ‘ম্যানেজ’-এর পথে হাঁটছেন। প্ল্যানের বাইরে যে বাড়তি তল তাঁরা তৈরি করেছেন, সেখানকার ফ্ল্যাটগুলি তাঁরা কিছুটা কম দামে ছেড়ে দিচ্ছেন স্রেফ ১০ বা ২০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে লেখালেখি করে।
বিপাকে পড়ে ফ্ল্যাটের মালিকরা পুরসভায় ছুটে ছুটে সিসি এবং মিউটেশন করাতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, তখন আর সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারের দেখা পাচ্ছেন না তাঁরা। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সারা জীবনের সঞ্চয় ভেঙে ফ্ল্যাট কেনা সাধারণ মানুষকেই। কলকাতা লাগোয়া বরানগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ রামকৃষ্ণ পাল বলেন, ‘সিসি না নেওয়া এবং প্ল্যান ছাড়াই কয়েকতলা বাড়িয়ে নেওয়ার শ’য়ে শ’য়ে উদাহরণ রয়েছে বরানগরেই। এই অসাধু প্রোমোটারদের কালো তালিকাভুক্ত করা জরুরি। তাই মোটা অঙ্কের জরিমানা করার পাশাপাশি থানায় এফআইআর দায়ের করা প্রয়োজন।’