পথ কুকুরের দাপট ক্রমশ বাড়ছে, হেলদোল নেই কোনও পুরসভার
বর্তমান | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: বাড়ি থেকে বেরনোর জো নেই। অফিস যাওয়া মাথায়! ছোট ছোট শিশুরা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। এই বুঝি ছুটে এসে কামড় বসিয়ে দেয় পায়ে! রাস্তা জুড়ে সারমেয়র দাপট এতটাই যে ছন্দপতন হচ্ছে দৈনন্দিন কাজকর্মের। উত্তর শহরতলির বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় ঘুরলেও কমবেশি একই চিত্র চোখে পড়বে। কুকুরের দাপটে এখন পথচলাই দায় সাধারণ মানুষের। প্রতি মাসে গড়ে শহরতলির হাজার খানেক মানুষ কুকুরের কামড় খাচ্ছেন। অথচ এবিষয়ে হেলদোল নেই কোনও পুরসভার। না আছে সারমেয়র জন্ম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ, না আছে কুকুর ধরে নিয়ে অন্যত্র রাখার ব্যবস্থা। এমনকী, খোদ হাইকোর্ট পথ কুকুরদের খাবার দেওয়ার জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা, নির্দিষ্ট সময়ে তাদের খাবার দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে পুরসভাগুলিকে নির্দেশ দিতে বলেছিল নগরোন্নয়ন দপ্তরকে। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে প্রচারও করতে বলেছিল হাইকোর্ট। কিন্তু সেই নির্দেশ কাগজে-কলমেই রয়ে গিয়েছে। এসব নিয়ে পুরসভার কোনও হুঁশ নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর শহরতলির বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় অলিগলি থেকে রাজপথ— কুকুরের দাপট ক্রমশ বেড়েছে। বিশেষ করে রাতের দিকে অফিস ফেরত মানুষ কুকুরের ভয়ে রাস্তায় হাঁটতে ভয় পান। শহরবাসীর অভিযোগ, কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও তাদের দাপট কমাতে পুরসভাগুলি কিছুই করছে না। তাদের দাপাদাপি কতটা বেড়েছে, তা একটি পরিসংখ্যানেই যথেষ্ট। ২০২৪ সালে দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকায় জীবজন্তুর কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৫,২২২ জন। এর মধ্যে কুকুরের কামড় খেয়েছেন প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ। অর্থাৎ মাসে গড়ে ৪০০-৫০০ জন। তাঁদের বড় অংশই পুরসভার সেন্টারে এসে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। দমদম, উত্তর দমদম, বরানগর, কামারহাটি, পানিহাটি ও খড়দহ ধরলে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কত হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশে নগরোন্নয়ন দপ্তর রাজ্যের সবকটি পুরসভাকে চিঠি দেয়। তাতে বলা হয়, প্রতিটি ওয়ার্ডে পথ কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করতে হবে। রাস্তা, ফুটপাত, দোকান, বাড়ি থেকে দূরে কোনও জায়গা একারণে চিহ্নিত করতে হবে। যাঁরা পথ কুকুরদের খাওয়াতে আসেন, তাঁদের সকাল ও সন্ধ্যা ৭টার আশপাশে খাবার দিতে হবে। ওই নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে খাবার দিলে পশুপ্রেমী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। গত ২৫ নভেম্বর সেই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। একমাস পর নগরোন্নয়ন দপ্তর ফের পুরসভাগুলিকে চিঠি দিয়ে জানতে চায় কী পদক্ষেপ করা হয়েছে। শহরবাসীকে সচেতন করার কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েচে, তাও জানতে চায় দপ্তর।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার সিআইসি (স্বাস্থ্য) সঞ্জয় দাস বলেন, কুকুরের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শহরজুড়ে হোর্ডিং, ব্যানার দিয়ে মানুষকে সচেতন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দ্রুত তা কার্যকর করা হবে।