• মার্ক্সের দাড়ি নেই, মাথা ভরা চুল লেনিনের,   জাদুঘরের সঙ্গে মিলছে না বইয়ের পাতার ইতিহাস!
    বর্তমান | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • সোহম কর, কলকাতা: বিরাট বড় ভারতীয় জাদুঘরে কতই না ‘প্রাচীন’ জিনিস! দশ, পাঁচ হাজার বছর আগে কেমন ছিল পৃথিবী? মমি থেকে জীবাশ্ম সে কথা জানান দেয়। এখন জাদুঘরের টেক্সটাইল গ্যালারিতে ঢুকলে রহস্য। মনে হবে বামপন্থীদের পার্টি অফিসে এসে পৌঁছলেন। দেওয়ালে টাঙানো ফ্রেম। তাতে ছবি। নীচে লেখা ছবির ব্যক্তিদের নাম। কারা তাঁরা? স্ট্যালিন, লেনিন, হো চি মিন, মার্ক্স, চে গেভারা ও গ্রামশি। কিন্তু স্ট্যালিন বললে তো ব্যাকব্রাশ করা বাদামী চুল, তীক্ষ্ণ চোখ আর গোঁফে ঢাকা শক্ত চোয়ালের কথা মনে পড়ে। এখানে স্ট্যালিনের হাসি হাসি মুখ। খোঁচা খোঁচা পাকা দাড়ি। মাথায় অল্প চুল। এতদিনের চেনা ছবির সঙ্গে মিল নেই এ ছবিটির। এর পাশে ফোকলা দাঁতে চে হাসছেন। হো চি মিনের থুতনিতে পরিচিত সেই দাড়ি উধাও। লেনিনের মাথা ভরা চুল। গ্রামশির মাথা ন্যাড়া। মার্ক্সের দাড়িটাই নেই। এসব দেখে সব যখন গুলিয়ে যাচ্ছে। তখন কিউরেটর এসে বললেন, ‘কোনও ভুল নেই। যাঁদের ছবি রাখা তাঁদের নাম ওটাই। পৃথিবীতে কি শুধু একজনের নামই লেনিন বা স্ট্যালিন?’


    ভারতীয় জাদুঘরে এই প্রদর্শনী চলছে। এই ছবিগুলি সে প্রদর্শনীর অঙ্গ। কিউরেটর সায়ন্তন মৈত্র বললেন, ‘কেরালার বিখ্যাত শিল্পী বিবেক বিলাসিনির কাজ এগুলি। কেরলে ওঁর বাবার গ্রামের বিভিন্ন মানুষের ছবি। এঁদের সকলের নাম এইরকম। সারা পৃথিবীতে বিলাসিনি এই মজার কাজের জন্য জনপ্রিয়।’ কী প্রতিক্রিয়া মানুষের? সায়ন্তনবাবু বলেন, ‘অনেকে এসে বলছেন, এটা কি ঠিক হল? আমি বলছি, এর মধ্যে কোনও মিথ্যে নেই। আপনি কি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আপনার নাম কেন এম কে স্ট্যালিন?’


    আর যাঁরা মার্ক্স-লেনিন-স্ট্যালিন নিয়ে সর্বক্ষণ চর্চা করছেন, সেই বাম নেতারা এই প্রদর্শনীর বিষয়ে বলছেন, ‘ইন্টারেস্টিং’। সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘দক্ষিণ ভারতে এরকম চল রয়েছে। আমি নিজে দেখেছি, বাড়ি বাড়ি অনেকের নাম সুভাষ, বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগর। কেরলে তো অনেক মানুষের নাম এরকম। আসলে কিছুই না, অনেকে তাঁর সন্তানদের নাম কোনও শ্রদ্ধেয় মানুষের নামে রাখতে চান। এটা তারই উদাহরণ।’ দক্ষিণপন্থীরা মাঝে মধ্যেই বলে থাকেন, ‘মার্ক্স-এঙ্গেলস এবং তাঁদের মতাদর্শ এখন জাদুঘরে স্থান পাওয়ার মতো।’ এই বঙ্গে সিপিএম শূন্য। তবে প্রকৃত বামপন্থীরা সর্বদা বলেন, ‘মতাদর্শ হল ‘বুলেটপ্রুফ’। আসন শূন্য হোক কিংবা মতাদর্শ জাদুঘরে থাকুক। তা অমর, অক্ষয়।’
  • Link to this news (বর্তমান)