• শহরে ‘নিখোঁজ’ কিশোর  ক্রিকেটারের মৃত্যু, রহস্য
    বর্তমান | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও সংবাদদাতা, বসিরহাট: ২৪ ঘণ্টা ধরে নিখোঁজ বাড়ির ছেলে। হাসনাবাদ থেকে রবীন্দ্র সরোবরে ক্রিকেট প্র্যাক্টিসে এসে সায়েন্স সিটি থেকে ‘বেপাত্তা’ হয়ে যায় ১৫ বছরের কিশোর দেব ঘোষ। তার খোঁজে হন্যে হয়ে রাতভর থানায় থানায় ঘুরলেন পরিবারের সদস্যরা। নিজেরাও বাইকে চেপে খোঁজ করলেন কিশোরের। শেষমেশ ভোররাতে দশম শ্রেণির ছাত্রের খোঁজ মিলল মিনাখাঁ হাসপাতালে। অসুস্থ অবস্থায় পরিজনরা এসএসকেএমে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দেবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কিশোর ক্রিকেটারের রহস্যমৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিস ও বসিরহাট পুলিস জেলা। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। 


    খেলতে এসে কী এমন হল কিশোরের? রাতভর সে ছিলই বা কোথায়? পকেটে থাকা মোবাইল কোথায় গেল? কীভাবে তার মৃত্যু হল? শারীরিক অসুস্থতা, নাকি খুন? একাধিক প্রশ্নচিহ্নকে কেন্দ্র করে রবিবার উত্তাল হয়ে উঠল হাসপাতাল চত্বর। পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সরব মৃতের পরিবার। মৃতদেহটি মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময় রীতিমতো বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। পুলিস বাধা দিলে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। ছেলের মৃতদেহের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে মূর্ছা যান নাবালকের মা। জ্ঞান ফিরলে তাঁর বক্তব্য, ‘পুলিস একটু আগে ব্যবস্থা নিলে আমার কোল খালি হতো না।’  


    হাসনাবাদ থানা এলাকার ন’পাড়ার বাসিন্দা দেব। মৃতের মামা জানান, প্রতিদিন সকালে রবীন্দ্র সরোবর আসার জন্য ভোর ৫টায় বের হতো সে। শনিবার কিছুটা দেরি হয়। কর্মসূত্রে তার বাবা উজ্জ্বল ঘোষ কলকাতায় থাকেন। দেরির কারণে শনিবার সকালে তিনি ছেলেকে প্র্যাক্টিসে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সায়েন্স সিটির কাছে আম্বেদকর ব্রিজের তলায় অপেক্ষা করছিলেন। সকাল ৭টা ও ৮টায় দু’বার বাড়ি থেকে ফোন আসে নাবালকের কাছে, কথাও হয়। কিন্তু আধঘণ্টা পরে উজ্জ্বলবাবু তাকে  ফোন করলে ‘সুইচড অফ’ দেখায়। দুপুর পর্যন্ত খোঁজ না পাওয়া গেলে হাসনাবাদ থানায় জানায় মৃতের পরিবার। মিসিং ডায়েরি রুজু হয়। সন্ধ্যায় প্রগতি ময়দান থানায় যান মৃতের বাবা ও মামা। পরিবারের অভিযোগ, থানার তরফে সহযোগিতা করা হয়নি। কলকাতা পুলিসের ডিসি (ইস্ট) অরীশ বিলাল বলেন, হাসনাবাদ থানায় আগেই কেস রুজু করা হয়েছিল। একই ঘটনায় দু’টি কেস করা যায় না। মৃতদেহের আজ ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা। তার ভিসেরা তদন্তের স্বার্থে সংরক্ষণ করা হবে। মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হলে পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


    রবিবার ভোররাতে মিনাখাঁ হাসপাতালের তরফে কিশোরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, মালঞ্চ মোড়ের কাছে এক সিভিক ভলান্টিয়ার রাস্তায় ওই কিশোরকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন। মা জানান, ‘হাসপাতালে শুয়ে ছেলে বলে, সায়েন্স সিটির কাছে বাস থেকে নামতে কয়েকজন ওর মোবাইল, ব্যাগ ছিনতাই করে। এরপরে গাড়িতে তুলে ইঞ্জেকশন জাতীয় কিছু দেয়। আর কিছু মনে নেই ছেলের। বাসন্তী হাইওয়ের কাছে তার জ্ঞান ফিরলে বাসে ওঠে। শরীর খারাপ করলে মালঞ্চ মোড়ে নেমে পড়ে। সেখানেই জ্ঞান হারায় সে।’
  • Link to this news (বর্তমান)