• ‘কোর্ট আছে’, নির্লিপ্ত সঞ্জয়, আজ সাজা ঘোষণা
    এই সময় | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • অর্পিতা হাজরা

    শনিবার বিকেলে জেলে ঢোকার ঘণ্টা খানেক আগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে শিয়ালদহ আদালত। কী রয়েছে তার ভাগ্যে, ফাঁসি, নাকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড— তা জানা যাবে আরও কয়েক ঘণ্টা বাদে। আজ, সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় আরজি করের ধর্ষণ–খুন মামলার সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক।

    তাতে কী? আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ–খুনে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায় কিন্তু নির্লিপ্ত। আজ আদালতের দিকে তাকিয়ে নির্যাতিতার বাবা–মা থেকে শুরু করে গোটা বাংলা। অথচ তাতে যেন পরোয়াই নেই সঞ্জয়ের। শনিবার বিকেলে আদালত থেকে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ফিরে নিরুত্তাপ সঞ্জয় এক জেলকর্মীকে বলে, ‘রায় যা–ই হোক না–কেন, আদালত যে সাজাই দিক না কেন, হাইকোর্ট–সুপ্রিম কোর্ট আছে তো!’

    সংশোধনাগার সূত্রের দাবি, শনিবার রাতে নিশ্চিন্তে খাওয়াদাওয়া করে কম্বল বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল সঞ্জয়। আপাতত প্রেসিডেন্সির পহেলা বাইশের তিন নম্বর সেলে একাই রয়েছে সে। তার সঙ্গে অন্য আসামিদের তেমন একটা বন্ধুত্ব নেই। সঞ্জয় জেলে আসার পর থেকে অন্য বন্দিরা তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে। সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুরে শিয়ালদহ আদালতে আনার আগেই দুপুরের খাবার দেওয়া হয়েছিল সঞ্জয়কে। বিকেলে জেল থেকে ফিরে নিজের সেলে চুপচাপ বসেছিল সে।

    জেলে রাতের মেনুতে ছিল রুটি আর সবজি। সংশোধনাগার সূত্রের খবর, এক জেলকর্মী তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আদালতের রায় ঘোষণার পরে তার কী মনে হচ্ছে! তখন সে বলে, ‘রায় যা–ই হোক, সাজা যা–ই হোক, উচ্চ আদালত আছে তো।’ ভাবখানা এমনই যেন, আদালত আজ যা–ই সাজা ঘোষণা করুক, সঞ্জয় নিশ্চিত, এরপর আইনি লড়াই আরও বহুদূর যাবে। এক জেলকর্মীর কথায়, ‘ও যে কোনও টেনশনে আছে, এটা দেখে বোঝার উপায়ই নেই। উল্টে জেলে গিয়েও যেন আমাদের হাইকোর্ট দেখাচ্ছে!’

    সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, সেলে বন্দিদের মাথাপিছু ছ’টি কম্বল দেওয়া হয়। তার মধ্যে তিনটি কম্বল মেঝেতে বিছিয়ে ঘুমিয়েছে সঞ্জয়। একটা বালিশ হিসেবে মাথার নীচে রেখে, দু’টি কম্বল গায়ে দিয়ে রাতে শুয়ে পড়েছিল সে। তার সেলে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির জন্য একজন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকে। এ ছাড়া দু’টো সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে সেলে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই এই সতর্কতা। পহেলা বাইশ সেলে এক থেকে ২২ নম্বর পর্যন্ত সেল রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মামলার বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আসামি আছে। তবে ধর্ষণ–খুনে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয়ের সঙ্গে এতদিনেও কারও তেমন একটা বন্ধুত্ব বা যোগাযোগ তৈরি হয়নি।

    শনিবার শিয়ালদহ আদালতে সঞ্জয় বারবারই দাবি করেছে, তাকে ফাঁসানো হচ্ছে, সে কোনও ভাবেই ধর্ষণ–খুনে জড়িত নয়। শিয়ালদহ ফার্স্ট অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজ অনির্বাণ দাস তাকে জানান, সোমবার সাজা ঘোষণার দিন তার কথা শুনবেন তিনি। তাই আজ আদালতে সঞ্জয় আরও কী দাবি করে, সে দিকেও তাকিয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। গত ৯ অগস্ট আরজি করের ধর্ষণ–খুন মামলার ১৬৪ দিন বাদে আজই সাজা ঘোষণা করবে আদালত।

  • Link to this news (এই সময়)