এই সময়: রবীন্দ্রসদনের কাছে ভিড়টা দিনের প্রায় বেশির ভাগ সময়েই দেখতে পাওয়া যায়। বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন ওঁরা। কোথায় গিয়েছিলেন? যাবেনই বা কোথায়? প্রশ্ন করলে যাত্রীদের একটা বড় অংশই জানান, সাঁতরাগাছি থেকে ঠাকুরপুকুর বা পাটুলি — এই রুটের যাত্রী তাঁরা। একটা সময়ে সাঁতরাগাছি থেকে ঠাকুরপুকুরের মধ্যে এস–৪২ এবং এসি–৪২ আর একই জায়গা থেকে পাটুলি যাওয়ার জন্য এস–৫৩ এবং এসি–৫৩ বাস চলত। এই চারটি বাসই ছিল সরকারি। কিন্তু এখন আর এই দুই রুটে কোনও সরকারি বাস চলে না।
সন্ধের পর থেকেই শহরের রাজপথে কমতে শুরু করে বাস। ঘড়ির কাঁটা ন’টার ঘরে গেলে বহু রুটের বাসই বেমালুম ভ্যানিশ হয়ে যায় পথ থেকে। এই তালিকায় শুধু যে বেসরকারি বাস বা মিনিবাস রয়েছে তা নয়, সরকারি বাসের বহু রুট গত কয়েক বছরে হয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে, অথবা সংখ্যা এতটাই কমে গিয়েছে যে নিত্যযাত্রীদের দৈনিক সমস্যা বেড়েই চলেছে। অতি সম্প্রতি যাত্রীদের সুবিধার জন্য রাজ্য পরিবহণ দপ্তর ৯০টি বাস নামানোর কথা ঘোষণা করেছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় আপাতত যাত্রী পরিবহণের জন্য ৫৫০টি বাস চালু আছে। সরকারি পরিকল্পনায় আরও ৯০টি বাস এই তালিকায় যুক্ত হলে সরকারি বাসের সংখ্যা ৬৪০–এ গিয়ে পৌঁছবে। যার ফলে যাত্রীদের অনেকটাই সুবিধা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কিন্তু, আদৌ কি তাই হবে? শহরের নিত্যযাত্রীদের ধারণা অবশ্য সরকারি মতের সঙ্গে মিলছে না। কলকাতা এবং রাজ্যের বাস ও বাসরুট এবং তাদের বিবর্তন নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কলকাতা বাস–ও–পিডিয়া। সংগঠনের পক্ষ থেকে অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায় ‘এই সময়’–কে বলেন, ‘বাংলা মানে শুধু কলকাতা নয়। ঠিক তেমনই কলকাতা মানেই ধর্মতলা আর সল্টলেক চত্বর নয়। এখন শহরের সরকারি বা বেসরকারি গণপরিবহণ প্রধানত এই দুটো জায়গাকে কেন্দ্র করেই চলছে। কিন্তু শহরের মধ্যে অন্য বহু বাসের রুট কয়েক বছরে হয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা রীতিমতো ক্ষয়িষ্ণু। প্রশাসনিক কর্তারা এটা দেখেও দেখছেন না।’
উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম — কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তের বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটের লম্বা ফিরিস্তি পেশ করে শহরের নিত্যযাত্রীরা বলছেন, ‘আগে ওই রুটগুলো চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। নতুন বাস নামানোর থেকেও সেটা বেশী কার্যকরী হবে।’ সাঁতরাগাছি রেল স্টেশন থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার বাসরুট বন্ধ হওয়ার উদাহরণের পাশাপাশি তাঁরা ক্ষয়িষ্ণু অথবা প্রায় বন্ধ সরকারি বাসের ভূরি ভূরি উদাহরণ দিয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছে মন্দিরতলা–বিবাদীবাগ (টি–টু), ধূলাগড়ি–রাজাবাজার ভায়া আন্দুল রোড (টি–ওয়ান) বাসের নাম। একদা ব্যস্ত এই দুই রুটেই এখন একটি করে বাস চলে। নিত্যযাত্রীদের কথায় উঠে এসেছে মুন্সিরহাট থেকে হাওড়া (সি–ইলেভেন বাই ওয়ান), হাওড়া–রামরাজাতলা (ডি–ফিফটিন) রুটের কথাও। সরকারি এই রুটগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
রাজ্য বাসযাত্রী সমিতির পক্ষ থেকে শ্যামল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সরকারি বাসের পাশাপাশি বেসরকারি বাস ও মিনিবাসের অন্তত ৪০টি রুট বন্ধ হয়েছে গত তিন বছরে। মাসের হিসেবে বলতে গেলে বলতে হয়, প্রতি মাসে একটা করে রুট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন বাস নামানোর চেয়ে এই রুটগুলোর পুনরুজ্জীবন বেশি প্রয়োজন।’