• ‘নিয়ম’ মেনেও পিজিটি-রা কোপে কেন? ক্ষুব্ধ ডাক্তাররা
    এই সময় | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ এবং অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের সাসপেন্ডেড সাত স্নাতকোত্তর পড়ুয়া বা পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি) নির্দোষ এবং তাই তাঁদের সাসপেনশন প্রত্যাহার করা হোক — এই মর্মে স্বাস্থ্যভবনে চিঠি লিখলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মৌসুমি নন্দী।

    বস্তুত, জুনিয়র ডাক্তারদের আবেদনই তিনি স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে ফরোয়ার্ড করেছেন। তাতে দাবি করা হয়েছে, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা-শিক্ষার নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) গাইডলাইন মেনেই নিজেদের দায়িত্বে ওই পিজিটি-রা সিজ়ার ও অ্যানাস্থেশিয়ার কাজ সেরেছিলেন সে রাতে। কারণ ওই গাইডলাইনই তাঁদের সিনিয়রদের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন ভাবে (ইন্ডিপেন্ডেন্টলি) কাজ করার অনুমতি দেয়। এই যুক্তিতে কর্মবিরতি না–করলেও সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে রবিবারও অবস্থান চলেছে জুনিয়র ডাক্তারদের।

    গত ৮ অগস্ট রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সিনিয়রদের উপস্থিতি ছাড়াই প্রসূতির সিজ়ারের অস্ত্রোপচার ও তার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যানাস্থেশিয়া করেন সাত জুনিয়র ডাক্তার। তার মধ্যে এক প্রসূতি মারা যান ও চার প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই ঘটনায় রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (আরএল) স্যালাইনের পাশাপাশি কাঠগড়ায় ওঠে সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজও। এর পরেই স্বাস্থ্য দপ্তর ওই মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার এবং অনুপস্থিত পাঁচ সিনিয়র ডাক্তারের পাশাপাশি সাত জুনিয়র ডাক্তারকে সাসপেন্ড করে।

    এই সাত জনের মধ্যে শ্বেতা সিং, পূজা সাহা, সুশান্ত মণ্ডল, মৌমিতা মণ্ডল ও ভাগ্যশ্রী কুণ্ডু প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের পিজিটি এবং জাগৃতি ঘোষ ও মণীশ কুমার অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের পিজিটি। এই সাত পিজিটি-ই মেদিনীপুর মেডিক্যালের উপাধ্যক্ষের পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা, এনএমসি এবং সিআইডি-কে চিঠি লিখে তাঁদের সাসপেনশন প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, যে হেতু এনএমসি-র নির্দেশিকা মেনে তাঁরা কাজ করেছেন, তাই তাঁরা কোনও অনিয়ম করেননি। কারণ স্বাধীন ভাবে ‘কাজ’-এর হিসেব তাঁদের রাখতে হয়।

    সাসপেন্ডেড পিজিটি-দের এই বক্তব্যকে সমর্থন জানাচ্ছে চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশও। আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ, জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের সভাপতি অনিকেত মাহাতো বলছেন, ‘সিনিয়র থাকবেন কি না, সেই দায়িত্ব তো জুনিয়র ডাক্তার নিতে পারেন না। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কোনও সার্জিক্যাল বা অ্যানাস্থেটিক গাফিলতির প্রমাণ মেলেনি। ওঁরা বরং আসন্নপ্রসবাদের সিজ়ার করেছিলেন। এবং সে কাজ করার অনুমতি তাঁদের দেয় এনএমসি-ই। তা হলে ওঁদের সাসপেন্ড করা কেন?’ একই প্রশ্ন তুলছেন অন্য চিকিৎসকরা। সিনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতির বিষয়টি সমর্থন না–করলেও, জুনিয়র ডাক্তারদের কোনও ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা।

    পেশায় অ্যানাস্থেটিস্ট, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক রাজীব পান্ডে বিস্মিত এই সাসপেনশন দেখে— ‘এই সরকারই তো এমবিবিএস পাশ চিকিৎসককে জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার পদে যোগ দেওয়ানোর সময়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দেয় প্রসব করানো নিয়ে। তিনি যদি ৬ মাসের প্রশিক্ষণে সেই কাজ করতে পারেন, তা হলে দু’-তিন বছর বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ পেয়ে একজন পিজিটি সেই অপারেশন করতে পারবেন না!’

    চিকিৎসক সংগঠন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের কলকাতা জেলার যুগ্ম সম্পাদক কবিউল হকেরও প্রশ্ন, ‘এনএমসি গাইডলাইনের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত পঞ্চম চ্যাপ্টারের পঞ্চম পয়েন্টে পরিষ্কার লেখা রয়েছে, একজন পিজিটি-কে তাঁর ইন্ডিপেন্ডেন্ট কেস করার খতিয়ান ই-লগ বুকে তুলে রাখতে হবে ধারাবাহিক ভাবে। তা হলে নিজে থেকে সিজ়ার করাকে কেন কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে?’ ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্রর বক্তব্য, ‘এনএমসি গাইডলাইন অনুযায়ী, একজন পিজিটি অপারেশনে সহায়তা এবং স্বাধীন ভাবে অপারেশন করতে পারেন। অবশ্যই সিনিয়রের তত্ত্বাবধান থাকবে। যা আমাদের দেশে এবং বিদেশে, সর্বত্র প্রচলিত। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের এ ভাবে সাসপেন্ড করা যায় না। মেদিনীপুরের এই ঘটনার দায়ভার বর্তায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা সিনিয়র ডাক্তার অথবা ইউনিট হেডের উপরে।’

    একই কথা রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে শনিবার দাবি করেছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের সাত সতীর্থের সাসপেনশন না–উঠলে অধ্যক্ষের অফিসের সামনে তাঁদের অবস্থান চলবে। যদিও রবিবার সন্ধেয় অধ্যক্ষ মৌসুমি নন্দী বলেন, ‘জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থানে বসেছেন। ওঁঁরা অবস্থান তুলেও নেবেন। ওঁরা তো ট্রেনি। আমরা ওঁদের জন্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে একটা চিঠি পাঠিয়েছি।’

  • Link to this news (এই সময়)