আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় শনিবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সঞ্জয় রায়। সোমবার তার বক্তব্য শুনে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস শাস্তি ঘোষণা করবেন। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪(ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণ জনিত আঘাতের কারণে মৃত্যু), ১০৩(১)(খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সঞ্জয়। আইনজীবী মহলের একাংশের কথায়, সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এই ঘটনা বিরলতম। ফলে কী শাস্তি সঞ্জয়কে দেওয়া হবে তার আগাম অনুমান সম্ভব নয়। তবে খুন ও ধর্ষণের মামলায় দোষীর সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি এবং সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, তা আগেই সঞ্জয়কে জানিয়েছেন বিচারক।
সোমবার সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তা শিয়ালদহ আদালত চত্বরে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মামলায় বিচার চলাকালীন খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সমস্ত বায়োলজিক্যাল রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছিলেন বিচারক। সঞ্জয়-সহ ৫১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। সমস্ত তথ্য-প্রমাণ খুঁটিয়ে দেখেছেন বিচারক।
গত বছর ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুম থেকে। তাঁকে ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের মধ্যে কর্তব্যরত অবস্থায় কে এই নৃশংস কাজ করেছিল তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছিল। কলকাতা পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে ১০ অগস্ট গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে।
১২ অগস্ট এই মামলার কিনারা করতে কলকাতা পুলিশকে ৭ দিনের ‘ডেডলাইন’ দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা পুলিশ ব্যর্থ হলে মামলা সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তার আগেই গত ১৩ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট মামলার তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেয়।
২৫ সদস্যের টিম তৈরি করে তদন্ত শুরু হয়েছিল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে আরজি করে চিকিৎসকের খুনে তথ্য ও প্রমাণ লোপাট, ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তিন মাসেও তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি সিবিআই। ফলে ওই মামলায় জামিন পেয়েছেন দু'জনেই। তবে আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত সিবিআই-এর মামলায় এখনও জামিন না পাওয়ায় জেলেই রয়েছেন সন্দীপ।
আরজি কর কাণ্ড গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সুবিচারের দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন করেছিলেন সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার সময়ে বিচারক সঞ্জয়ের বক্তব্য শুনবেন। দুপুরে সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা। রবিবার সন্ধ্যায় নির্যাতিতার মা বলেন, ‘বিচারক যা ভালো মনে করবেন সেই শাস্তিই তিনি দেবেন। তবে বিচার প্রক্রিয়ার শেষ এখানেই নয়।’