• সব পকসো মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নয় কেন, বাধা কোথায়?
    এই সময় | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • ২০১২-এ পকসো আইন আসার পরে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের মামলায় বারাসত থানার পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাত দিনে চার্জশিট দিয়েছিল। এক মাসের মধ্যে সাজা ঘোষণা করেছিল আদালত। পুলিশ ও আইনজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, এখনও পর্যন্ত সম্ভবত এটাই রাজ্যে সবচেয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া পকসো মামলা।

    তবে সার্বিক পরিসংখ্যান বলছে, বাংলায় পকসো মামলার নিষ্পত্তি হতে গড়ে প্রায় তিন বছর লাগছে। সম্প্রতি কুলতলি, ফরাক্কা বা গুড়াপে নাবালিকার ধর্ষণ–খুন মামলায় ৫২ থেকে ৬৪ দিনের মধ্যে সাজা ঘোষণা করেছে আদালত। এই উদাহরণ দেখিয়ে একটা প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে উঠছে যে, সবক’টি পকসো কেসে এত দ্রুত বিচার হচ্ছে না কেন?

    পুলিশের একটি মহলের যুক্তি, তদন্তকারীদের দায়িত্ব দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দায়ের করা পর্যন্ত। বাকিটা পুরোটাই জুডিশিয়ারি বা বিচার ব্যবস্থার এক্তিয়ারে। ফলে সেখানে কতটা দেরি হবে, তা তাদের এক্তিয়ারে নয়। পুলিশেরই অন্য একটি অংশের বক্তব্য, শুধু চার্জশিট পেশ করা নয়, তারপরে চার্জ গঠন, দ্রুত ট্রায়ালের জন্য সাক্ষীদের নির্দিষ্ট দিনে হাজির করা— এই পুরো বিষয়টাও তদন্তকারী সংস্থাকেই নিয়মিত মনিটর করতে হয়। সেটা না–হলেই মামলা দীর্ঘায়িত হয়। আবার আইনজ্ঞ মহলের দাবি, অনেক সময়েই ঠিক মতো তদন্ত না করে চার্জশিট জমা করে পুলিশ। সে ক্ষেত্রে বাকি প্রক্রিয়াও দীর্ঘায়িত হয়।

    এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, এত দ্রুত কিছু মামলার রায় হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের মনে একটা ‘সেন্স অফ জাস্টিস’ তৈরি হয় কিন্তু এগুলো ‘ব্যতিক্রম।’ যদিও পুলিশের একটা বড় অংশেরই মত, যে সব মামলা নিয়ে মিডিয়া বা সাধারণ মানুষের নজর বেশি থাকে, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিত মনিটর করা হয়। কখনও কখনও নির্দিষ্ট পুলিশ আধিকারিকের উদ্যোগে মামলা নিয়ম করে মনিটর করা হয়, যাতে তার দ্রুত ট্রায়াল হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দৈনন্দিন আইন–শৃঙ্খলা, অপরাধ দমন সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের চাপ থাকে। সেই তুলনায় পরিকাঠামোগত, আর্থিক বা কর্মী সংখ্যা সংক্রান্ত সমস্যা তো রয়েইছে।’

    এক পুলিশকর্তার আবার বিচারব্যবস্থার ভূমিকার কথাও বলছেন এ প্রসঙ্গে। তাঁর দাবি, প্রতি তিন মাস অন্তর বিচারকদের কেস ডিসপোজ়ালের হার বা সহজ কথায় পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখা হয়। তবে সেই হার ভালো রাখতে গিয়ে অনেক সময়ে তুলনায় ‘দুর্বল’ মামলা এগিয়ে এনে নিষ্পত্তি করে দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক কেস পড়েই থাকছে। ফলে হতাশ হয়ে অনেতে সাক্ষ্য দিতেই আসছেন না।

    সরকারি কৌঁসুলিদের কেউ কেউ এই বিষয়টা খানিকটা মেনে নিয়েও বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে নিখুঁত চার্জশিট দেওয়া হলেও শুনানির দিন পিছিয়ে যাচ্ছে নানা কারণে। বহু পকসো মামলায় সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে লড়া এক আইনজীবীর ব্যাখ্যা, ‘বিচারকদের মধ্যে অনেকে মামলাগুলি নিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস। সেই কারণেই ঝাড়গ্রাম, কালিম্পং, জলপাইগুড়ির মতো জেলায় পকসোর পাশাপাশি বিভিন্ন মামলায় দ্রুত বিচার শেষ করে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে অভিযুক্তকে।

    একটি জেলার এসপি–র দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, ‘কোনও মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন মামলাকে প্রায়োরিটাইজ় করা, কেসের গুরুত্ব বিচার করে স্পেশাল পিপি নিয়োগ ও সাক্ষীদের সুরক্ষা দেওয়া দরকার। তার সঙ্গে বিচারব্যবস্থার সমন্বয় হলেই সেই মামলা দ্রুত ডিসপোজ় করা সম্ভব।’ অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতির কথায়, ‘বিষয়টা পুলিশ বনাম জুডিশিয়ারি হওয়া কাম্য নয়। দু’পক্ষেই কিছু সমস্যা রয়েছে। দ্রুত বিচার পেতে হলে সে সব দূর করতে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)