আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে আইন ভাঙছেন অন্য কেউ, জরিমানা দিচ্ছেন আপনি!
চেনা পরিসরে, ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় বার বারই অভিযোগ আসে, গাড়ি বাড়ি থেকে বের না করেও ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্য ফাইনের মেসেজ এসেছে। কেউ আমেরিকা বসেও মেসেজ পান, তাঁর হাওড়ার বাড়ির তালাবন্ধ গ্যারাজের ভিতরে থাকা গাড়ি নাকি সল্টলেকে ট্র্যাফিক সিগন্যাল ভেঙেছে! তাই ফাইন ভরতে হবে।
প্রশ্ন উঠেছে বার বারই, কী ভাবে এমন ডিজিটাল ভ্রান্তিবিলাস সম্ভব? এ বার জানা যাচ্ছে, ডুপ্লিকেড নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে ট্র্যাফিকের ফাইন থেকে বাঁচার ছক চলছে নানা জায়গাতেই। একটি ঘটনার তদন্তে এমন কারিকুরি সামনে এসেছে কলকাতা পুলিশেরও।
সম্প্রতি কলকাতা পুুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্র্যাফিক) ওয়াইএস জগন্নাথ রাওয়ের অফিসে ইমেল মারফত অভিযোগ জানান বীরভূমের এক বাসিন্দা। অভিযোগ, তাঁর গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর কেউ বেআইনি ভাবে অন্য গাড়িতে ব্যবহার করছেন এবং যথেচ্ছ ট্র্যাফিক আইন ভাঙছেন। কারণ ওই রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি নাকি একবার হাতিবাগান ও আর একবার সায়েন্স সিটির কাছে ট্র্যাফিক আইন ভেঙেছে। অথচ আসল গাড়িটি রাখা রয়েছে সিউড়িতে! যতবার পুলিশের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় সেই নম্বরটি পথে অনিয়মের জন্য ধরা পড়ছে, ততবারই ফাইনের মেসেজ পাঠাচ্ছে পুলিশ। এক্ষেত্রে ট্র্যাফিক আইন ভাঙছে অন্যের নম্বরপ্লেট বসানো গাড়িটি, আর তার মাসুল দিতে হচ্ছে অভিযোগকারীকে। কারণ নম্বরটি তাঁরই নামে নথিভুক্ত।
বীরভূমের ওই বাসিন্দা কীভাবে বুঝলেন যে তাঁর গাড়ির নম্বরপ্লেট কপি করা হয়েছে?
ট্র্যাফিক কর্তাদের তিনি জানান, মাস ছয়েক আগে গাড়ি কিনেছেন বীরভূমেই। কেনার পরে একবারও কলকাতায় গাড়ি নিয়ে যাননি। অথচ, মোবাইলে বেশ কয়েকবার কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ এলাকায় কেসের এসএমএস আসছে। অভিযোগ পেয়ে গাড়ির নম্বর ধরে ফুটেজ খুঁজতে শুরু করেন কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের পাবলিক গ্রিভান্স সেলের সার্জেন্ট সুরজিৎ রায়। গাড়ির কাগজ এবং কয়েক ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পরে সামনে আসে অন্যের নম্বরপ্লেট বসিয়ে ট্র্যাফিক আইন ভাঙা গাড়িটি।
এর পরেই অভিযুক্ত গাড়ি–মালিককে তাঁর ব্যবহৃত গাড়ির সব নথিপত্র–সহ তলব করে পুলিশ। সুরজিৎ চৌধুরী নামের ওই ব্যক্তিকে আটক করে গাড়ি–সহ তুলে দেওয়া হয় হেয়ার স্ট্রিট থানার হাতে। এর পর সুরজিৎকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ট্র্যাফিকের জরিমানা থেকে বাঁচতেই তিনি অন্যের রেজিস্ট্রেশন নম্বর গাড়ির প্লেটে লাগিয়েছিলেন বলে জেরায় স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত, দাবি পুলিশের। ফাইন এড়াতে এমন কারিকুরির ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে তাঁরা দেখেননি, বলছেন কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের অফিসাররা। তাঁদের বক্তব্য, অপরাধমূলক ঘটনায় শহরে যে সব বাইক বা গাড়ি জড়িত থাকে, সেগুলির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নম্বরপ্লেট থাকে না। আর থাকলেও সেগুলো ভুয়ো।
পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘একই নম্বর দুটি গাড়িতে ব্যবহার করা বড় ধরনের অপরাধ৷ এর জন্য মোটা টাকা জরিমানা করার ব্যবস্থা আছে৷ গাড়ির কাগজ দেখলেই নম্বরটি আসলে কোন গাড়ির, তা বোঝা যায়।’ পরিবহণ মন্ত্রীর পরামর্শ, ট্র্যাফিকের জরিমানা নিয়ে কোনও সন্দেহ হলে পুলিশে বা পরিবহণ দপ্তরের অফিসে যোগাযোগ করুন নাগরিকরা। যদিও তার পরেও প্রশ্ন উঠছে, সিকিওরড নম্বরপ্লেট যদি এত সহজেই কপি করা যায়, তবে নিরাপত্তা রইল কোথায়!