• মানসিক সমস্যার সঙ্গে বাড়ছে মন ভালো করার পেশাও
    এই সময় | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: এই ‘নাটক’–এর কোনও চিত্রনাট্য থাকে না। যাঁরা নাটকে অংশ নেন, তাঁরা সকলেই প্রায় নির্দিষ্ট কোনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। হয়তো সকলেই অল্পে রেগে যান। হয়তো সকলেই অতীতের কোনও খারাপ ঘটনায় ভুক্তভোগী। তাঁদের একসঙ্গে এক জায়গায় জমা করেই ‘মন ভালো’ করার উপায় খোঁজেন কোনও মনোবিদ।

    অনেক সময়েই তিনি সমস্যায় পড়া মানুষদের নির্দেশ দেন — জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে নিজের সমস্যা সম্পর্কে নিজের সঙ্গেই আলোচনা করতে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একেই বলা হয় ‘সাইকো ড্রামা’।

    সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা ধরনের মানসিক সমস্যাও। সেই সমস্যা থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য মনোবিদরা উপায় খুঁজে চলেছেন। এমনই পরিস্থিতিতে প্রায় একশো বছরের পুরোনো ‘সাইকো ড্রামা’ খুবই কার্যকর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথাগত কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি তাই এই বিদ্যা হয়তো আগামী দিনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পেশা হয়ে উঠতে পারে।

    হাতের লেখা বিশ্লেষণ করে মানসিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত একটি ধারণা করতে পারেন যাঁরা, তাঁরাই ‘গ্রাফোলজিস্ট’। প্রধানত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ও ইউএসএ–তে মনোবিদ্যার এই শাখাটি নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু হয়েছিল। তবে পরবর্তী কালে ভারতেও এর চর্চা শুরু হয়। এমনকী কলকাতাতেও তৈরি হয় ‘কলকাতা ইনস্টিটিউট অফ গ্রাফোলজি’। রবিবার এই সংস্থার ১৮তম বার্ষিক সম্মেলনে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল আগামী দিনে কী ভাবে গ্রাফোলজি অত্যন্ত আকর্ষক একটা পেশা হিসেবে সামনে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে ওই সম্মেলনে আলোচনা হয় মানসিক সমস্যা সমাধানের একশো বছরেরও পুরোনো পদ্ধতি ‘সাইকো ড্রামা’ নিয়েও।

    পৃথিবীতে সব স্তরের মানুষদের মধ্যেই মানসিক অস্থিরতা বাড়ছে। এই কারণে আগামী দিনে ‘মন ভালো করার’ ডাক্তারদের চাহিদা যে বাড়তেই থাকবে সে বিষয়ে এক রকম নিশ্চিত চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতের লেখায় সামান্য কিছু পরিবর্তন করলে অর্থাৎ ‘গ্রাফোথেরাপি’ প্রয়োগ করলে মানসিকতার বড় রকমের পরিবর্তন আনা সম্ভব। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানসিক অবস্থা বোঝার জন্য এবং মানসিক সমস্যা সমাধানে গ্রাফোলজি ও গ্রাফোথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর।’

    এই সম্মেলনে কলকাতা ইনস্টিটিউট অফ গ্রাফোলজির ডিরেক্টর মোহন বসুর কথায়, ‘ভারতে গ্রাফোলজির বিরাট ভবিষ্যৎ। ফরেন্সিক সায়েন্সে প্রয়োগ থেকে শুরু করে গ্রাফোথেরাপির মাধ্যমে সমস্যা সমধান — আগামী দিনে প্রচুর নতুন পেশার জন্ম দেবে এই বিদ্যা।’ গত দু’বছর ধরে সাইকো ড্রামার মাধ্যমে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    তাঁর দাবি, ‘১৯২০–র দশকে ইউএসএ–র মনোবিদ জেকব মোরেনো প্রথম এই ধরনের প্রয়োগ করেন। ইন্ডিয়ান সাইকোঅ্যানালিটিক সোসাইটিতে পড়ার সময়ে আমি এই বিষয়ে জানতে পারি এবং আগ্রহী হই। গত দু’বছরে এই পদ্ধতির প্রয়োগে অনেকেই উপকৃত হয়েছেন।’

  • Link to this news (এই সময়)