• বিজ্ঞাপনের শর্তে বেসরকারি সংস্থার হাতে বাতিস্তম্ভ মেরামতের দায়িত্ব
    বর্তমান | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া: বাঁকুড়া পুরসভার বর্তমানে ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থা। শহরের ত্রিফলা বাতি মেরামত করতে গিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের নাভিশ্বাস উঠছে। এই পরিস্থিতিতে পুর এলাকার ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব একটি বেসরকারি বিজ্ঞাপনী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার সঙ্গে পুরসভার চুক্তি হয়ে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ত্রিফলা বাতিস্তম্ভে বিজ্ঞাপনযুক্ত বোর্ড টাঙাবে। তার পরিবর্তে পুরসভাকে কোনও অর্থ তারা দেবে না। বদলে বেহাল ত্রিফলা বাতি মেরামত ও তা পরবর্তীকালে রক্ষণাবেক্ষণ তারা করবে। দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে। 


    বাঁকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অলকা সেনমজুমদার বলেন, ত্রিফলা বাতিস্তম্ভগুলি একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু, কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলি ফের খারাপ হয়ে যায়। বেশিরভাগ বাতি জ্বলে না। কিছু জায়গায় তা ভেঙে চুরেও গিয়েছে। এভাবে বারবার পুরসভার টাকা খরচ করার কোনও মানে হয় না। সেই কারণে আমরা বেসরকারি বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে ত্রিফলা বাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছি। তার পরিবর্তে তারা বাতিস্তম্ভে বিজ্ঞাপনের বোর্ড লাগাবে। 


    তিনি আরও বলেন, পুরসভার উপরে আর্থিক বোঝা দিনদিন বেড়েই চলেছে। নিজস্ব তহবিল থেকে আমাদের অনেক খরচ মেটাতে হয়। অথচ তা বৃদ্ধির কোনও সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের অন্তত ১০ শতাংশ টাকা পুরসভাগুলিকে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা দাবি জানিয়েছি। ওই টাকা দিলে তা দিয়ে জঞ্জাল বহনের গাড়ি সহ অন্যান্য সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণ করা যাবে। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। সেই কারণে সমস্যা হচ্ছে।  


    বিজেপি নেতা তথা বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা সুভাষ সরকার বলেন, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের আওতায় রাজ্যকে আগের তুলনায় চারগুণ টাকা দেওয়া হয়েছে। পুরসভাগুলিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আম্রুত, সবুজায়ন সহ অন্যান্য প্রকল্পের অর্থ খরচ হয় না। সঠিক হিসেবও পেশ করা হয় না। ফলে তৃণমূল পরিচালিত পুর কর্তৃপক্ষের মুখে বঞ্চনার কথা মানায় না। আর্থিক অবস্থা কোনও পরিস্থিতিতে পৌঁছলে পুরসভা নিজেদের বসানো ত্রিফলা বাতি মেরামত করতে পারে না, তা ভেবে দেখা উচিত। এভাবে বেসরকারি সংস্থার হাতে বাতিস্তম্ভগুলি তুলে দেওয়া হলে শহরে দৃশ্যদূষণ ছড়াতে পারে। ওই সংস্থার দেওয়া বিজ্ঞাপনের ভাষা বা ছবির বিষয় নিয়েও পুরসভার কি কিছু বলার অধিকার থাকবে?


    পুরসভার ভা‌ইস চেয়ারম্যান হীরালাল চট্টরাজ বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আমাদের চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞাপন যেন রুচিশীল হয়, সেব্যাপারে সংস্থাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তা না হলে আমরা ওই চুক্তি বাতিল করে দেব। শহরের দৃশ্যদূষণ হয় এমন কোনও কাজ পুরসভা বরদাস্ত করবে না। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় বেসরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন থাকে। 


    উল্লেখ্য, প্রায় ১৫ বছর আগে বাঁকুড়া শহরে ত্রিফলা আলো বসানো হয়। মাচানতলার আইজি অফিস মোড় থেকে ভৈরবস্থান হয়ে চাঁদমারিডাঙার রাস্তা ও স্কুলডাঙায় প্রায় ৭৫টি ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বসানো হয়। সেগুলি বসানোর কিছুদিনের মধ্যেই বেহাল হতে শুরু করে। বর্তমানে সিংহভাগ বাতি আর জ্বলে না। ফলে শহরের ওইসব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সন্ধ্যা ঘনালেই অন্ধকারে মুখ ঢাকে।
  • Link to this news (বর্তমান)