সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
শুক্রবারের পরে ফের বাঘের দু’টি নতুন ছবি প্রকাশ্যে আনল বন দপ্তর। তবে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা এলাকার ঘাঁটিগুড়ির জঙ্গলে বাঘের যে ছবি পাওয়া গিয়েছে, তাতে একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। তা হলে কি বাঘ পা বাড়াচ্ছে ঝাড়খণ্ডের দিকে।
রবিবার ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে ট্র্যাপ ক্যামেরায় বাঘের ছবি পাওয়া ওই এলাকার মাত্র তিন কিমি দূরেই ঝাড়খণ্ডের সীমানা। এক সপ্তাহ আগে এই এলাকা দিয়েই বাঘটি ঝাড়খণ্ডের চান্ডিল বনাঞ্চল থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে বলে ধারণা বনকর্তাদের।
ছবিতে ধরা দিলেও তাকে ধরার জন্য জঙ্গলে পেতে রাখা পাঁচটি খাঁচার ধারেকাছেও ঘেঁষেনি বাঘ। নতুন করে কোনও শিকারের খবরও পাওয়া যায়নি। গত মাসের শেষে বাঘিনি জ়িনাত ঝাড়খণ্ড থেকে ঝাড়গ্রাম হয়ে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়েছিল। তার খোঁজেই ফেরোমেনের সূত্র ধরে পুরুষ বাঘটি এসেছে বলে মনে করছেন বনকর্তারা।
বাঘিনিকে না পেয়ে নিজের চেনা পথ ধরে ঝাড়খণ্ডে বাঘ ফিরে যেতে পারে বলে প্রত্যাশা রয়েছে বন দপ্তরের। সেই মতো ঝাড়খণ্ডের দিকে তার যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা তৈরি করা হয়নি।
অন্য দিকে, বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর এবং বান্দোয়ান ব্লক সদরের দিকে প্রায় পুরোটাই জাল দিয়ে ঘিরে দিয়েছে বন দপ্তর। বাঘ ঝাড়খণ্ডের দিকে রয়েছে সে কথা স্বীকার করে মুখ্য বনপাল (সেন্ট্রাল সার্কল) সিঙ্গরম কুলানডাইভেল বলেন, ‘দু’টি ফুটেজ ও বাঘের পায়ের ছাপ বিশ্লেষণ করে বোঝা গিয়েছে, সে ঘাঁটিগুড়ির জঙ্গলে রয়েছে। ওখানে একটি জলাশয় রয়েছে। সেখান থেকে জলও খেয়েছে। তাকে দুপুরের দিকে ড্রাইভ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন দেখা গেল, ও একটা আওয়াজ দিয়ে চলে গেল। আবার তাকে ড্রাইভ করার চেষ্টা করা হবে।’
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিনশো বনকর্মী এবং বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যরা বাঘকে ধরার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। যে বাঘটির ছবি পাওয়া গিয়েছে, তার বয়স ১২ থেকে ১৫–র মধ্যে। ওজন দেড়শো কেজিরও বেশি বলে মনে করছেন বনকর্তারা।
এমন একটি বাঘের ছবি পুরুলিয়ার জঙ্গলে পাওয়ায় বাস্তবে উচ্ছ্বসিত বনাধিকারিকরা। মুখ্য বনপালের মতে, এটা বন দপ্তরের সাফল্য। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গে জঙ্গলের মান অনেক উন্নত হয়েছে। মধ্য ভারতের যে জঙ্গলগুলিতে বাঘ থাকে, চরিত্রে তার মতোই হয়ে উঠেছে এখানকার জঙ্গল। তাই বাঘ উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে পাচ্ছে। রয়েছে পর্যাপ্ত শিকার এবং জলের ব্যবস্থা।’
এই বনকর্তা জানাচ্ছেন, চাকরি জীবনে গত ২০ বছর ধরে এই এলাকা দেখে আসছেন তিনি। এই মুহূর্তে বাঘ, মানুষ কেউ যাতে কারও ক্ষতি করতে না পারে তা দেখাই এখন বন দপ্তরের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ।