• গুণের মধ্যে সবই ‘দোষ’, দাবি সাজ্জাকের গ্রামের বাসিন্দাদের
    এই সময় | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • নীলাঞ্জন দাস, রায়গঞ্জ

    খুন, ডাকাতি, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি— তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। শনিবার ভোরে কিচকটোলায় পুলিশের এনকাউন্টারে মারা যাওয়ার পরে রাতারাতি ‘কুখ্যাত’ তকমাও পেয়ে গিয়েছে সাজ্জাক আলম।

    বছর পঁচিশের সাজ্জাক পারিবারিক জীবনে কেমন ছিল, রবিবার উঠে এসেছে সেই তথ্যও। শনিবার রাতেই তার দেহ নিয়ে আসা হয় রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রবিবার সেখানেই ময়নাতদন্ত হয়েছে। তারপরে সাজ্জাকের দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে।

    বুধবার পাঞ্জিপাড়া এলাকায় একটি প্রিজ়ন ভ্যান থেকে সাজ্জাক পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে চম্পট দেয়। তারপরে বহু প্রশ্নের পাশাপাশি একটি অন্য প্রশ্নও উঠেছিল— সাজ্জাক কী এমন করতে চেয়েছিল যে, পুলিশের উপরে গুলি চালাতো হলো?

    পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সাজ্জাকের দুটো বিয়ে। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মুসকান বেগম ও তাঁর মা সাবাতুন খাতুনও এ দিন মর্গে এসেছিলেন। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের সামনে সাবাতুন অভিযোগ করেন, ‘সাজ্জাকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বছর চারেকের নাতনিকে নিয়ে মুসকান আমার বাড়িতেই থাকে। মেয়ে ডিভোর্স চেয়েছিল। তারপরে জেলে থেকেই সাজ্জাক মুসকানকে নাগাড়ে খুনের হুমকি দিচ্ছিল।’

    সাবাতুনের সংযোজন, ‘বুধবার যখন শুনলাম, সাজ্জাক পুলিশকে গুলি করে প্রিজ়ন ভ্যান থেকে পালিয়েছে, তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সাজ্জাক সব কিছু করতে পারে। তাই কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে নাতনি ও মেয়েকে নিয়ে সোজা চলে গিয়েছিলাম গোয়ালপোখর থানায়।’ যদিও এ বিষয়ে সাজ্জাকের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মুসকান বেগম কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

    সাজ্জাকের প্রথম স্ত্রী আফরোজা খাতুনও এ দিন মর্গে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে স্বামী জেলে। তারপরে আর কোনও যোগাযোগ নেই। একমাত্র ছেলেকে নিয়েই আমি থাকি। বুধবারের ঘটনা শুনেছিলাম। কিন্তু ও বাড়িতে আসেনি। শনিবার পুলিশের গুলিতে ওর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছি।’ এ দিন সাজ্জাকের দেহ আফরোজার হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে।

    সাজ্জাকের জামাইবাবু তফিজুল হক বলেন, ‘দেড় বছর হলো আমার বিয়ে হয়েছে। সাজ্জাকের সঙ্গে সে ভাবে আমার আলাপই হয়নি। সাজ্জাক পুলিশকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার পরে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল পুলিশ। তাদের সবরকম ভাবে সহযোগিতা করেছি। পুলিশের এই কাজকে আমি সমর্থনও জানাচ্ছি। সবকিছুর একটা সীমা থাকে। সাজ্জাক সব সীমাই পেরিয়ে গিয়েছিল।’

    সাজ্জাকের মৃত্যুর খবরে তার গ্রাম ছোটসোহার স্বস্তি পেয়েছে। গ্রামের লোকজন কোনও রাখঢাক না-রেখেই সে কথা জানিয়েছেন। এ দিনও তাঁরা বলেন, ‘একটা ছেলের কোনও একটা গুণ তো থাকে। সাজ্জাকের কোনও গুণ ছিল না। সবটাই ছিল দোষে ভরা!’

  • Link to this news (এই সময়)