কৌশিক সেন, গোয়ালপোখর
কাল ছিল বেশ খালি। আজ লোকে যায় ভরে। সাজ্জাক আলম এনকাউন্টারে মারা যাওয়ার পরে গোয়লপোখরের কিচকটোলার অবস্থা অনেকটা এমনই। মানে, অকুস্থলই হয়ে উঠেছে সেলফি জ়োন। শনিবার ভোরে কিচকটোলায় শেরওয়ানি নদীর পাড়ে পুলিশের এনকাউন্টারে সাজ্জাক মারা যাওয়ার পরে সেই জায়গাই এখন আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে ‘দর্শনীয় স্পট’ হয়ে উঠেছে।
কিচকটোলা ব্রিজের উপর থেকে ওই ‘এনকাউন্টার স্পট’ স্পষ্ট দেখা যায়। ঘটনার পর থেকে দলে দলে লোকজন মোটরবাইকে চেপে বা পায়ে হেঁটে ওই স্পট দেখতে আসছেন। কেউ কেউ আবার এনকাউন্টার স্পটকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শনিবার বিকেল থেকেই ব্রিজের উপরে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। তবে ভিড়ে তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ রবিবার বিকেল থেকে কিঞ্চিৎ কড়াকড়ি শুরু করেছে।
পুলিশ, এনকাউন্টার, হইচই— সব মিলিয়ে নিস্তরঙ্গ কিচকটোলা যেন বহু দিন পরে জমজমাট। বাইরে থাকা আত্মীয়েরা ঘন ঘন ফোন করে জানতে চাইছেন, ‘কী ভাবে হলো? নিজে চোখে দেখেছিস?’ কখনও আবার কেউ জানতে চেয়েছেন, ‘মোট কতগুলো গুলি চলেছে রে?’ গ্রামের বাতাসেও ভাসছে একটাই আলোচনা— এনকাউন্টার, এনকাউন্টার এবং এনকাউন্টার।
সেলফি তোলার পাশাপাশি লোকজনের আলোচনায় ফিরে ফিরে আসছে পুলিশের এই ‘দাবাং পারফরম্যান্স’ও। গত বুধবার বিকেলে গোয়ালপোখর থানার পাঞ্জিপাড়া এলাকায় একটি প্রিজ়ন ভ্যান থেকে সাজ্জাক আলম পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। সাজ্জাক ও তার সঙ্গী আব্দুল হোসেন ওরফে আবালের (বাংলাদেশের বাসিন্দা) খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার ভোরে পুলিশ কিচকটোলা এলাকায় সাজ্জাককে প্রায় ধরেই ফেলেছিল। কিন্তু সে ফের পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তারপরে পুলিশের এনকাউন্টারে সাজ্জাক মারা যায়। আবালের খোঁজ না-পেলেও শনিবার রাতেই পুলিশ শেখ হজরত নামে সাজ্জাকের আর এক সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করেছে।
এনকাউন্টারের পরে কিচকটোলা ব্রিজ, নদীর পাড়ের বেশ কিছু এলাকা পুলিশ ঘিরে রাখে। কিন্তু সে কথা জানাজানি হতেই কিচকটোলা ব্রিজের আশপাশে ভিড় জমতে শুরু করে। বাঁশপোখর এলাকার বছর পঁচিশের যুবক রহমত আলি বলছেন, ‘এনকাউন্টার নিয়ে খবরে পড়েছি, সিনেমায় দেখেছি। আমার জেলায় এনকাউন্টারের কথা এই প্রথম শুনলাম। পুলিশের এই ‘দাবাং’ চেহারাও আগে দেখিনি। তাই নিজে চোখে একবার দেখার লোভ সামলাতে না-পেরেই এখানে চলে এসেছি।’
কলাইবাড়ি এলাকার আব্দুল কালামের কথায়, ‘দুটো মোটরবাইকে চার বন্ধু এসেছি। পুলিশ ব্রিজে উঠতে বাধা দিচ্ছিল। একটা অজুহাত দেখিয়ে ব্রিজ পার হওয়ার অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু পুলিশ দাঁড়াতেই দিল না। কোনও রকমে চলন্ত বাইক থেকেই ছবি তুলেছি। ওটাই ফেসবুকে আপলোড করব।’ গোয়ালপোখরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, ‘সাজ্জাক ফিল্মি কায়দায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে পালিয়েছিল। পুলিশও তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। পুলিশের এই ভূমিকায় আমরা খুশি ও গর্বিত।’