• আদালতে শাস্তি ঘোষণার দিন থমথমে তাঁর পাড়া, কেমন লোক সঞ্জয়, মিশ্র মত প্রতিবেশীদের
    আনন্দবাজার | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে শিয়ালদহ আদালত। সোমবার দুপুরে শাস্তি ঘোষণা করবেন বিচারক। এই অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে ফাঁসিও হতে পারে তাঁর। বিচারক সঞ্জয়কে কোন শাস্তির কথা শোনান, তা জানতে উদ্‌গ্রীব রাজ্য তো বটেই, দেশ-বিদেশের বহু মানুষ। তবে এই নিয়ে নিরুত্তাপ সঞ্জয়ের পাড়া। সঞ্জয় কেমন লোক, এই প্রশ্নের উত্তরেও মিশ্র অভিমত রয়েছে প্রতিবেশীদের।

    সঞ্জয়ের বাড়ি কলকাতার ৫৫বি শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটে। গলি পেরিয়ে বাড়িতে ঢোকার মুখেই একটি ছোট গেট। তার মাথায় বজরংবলীর একটি ছবি। মূল ফটক পেরিয়ে দ্বিতীয় যে বাড়িটি, সেটিই সঞ্জয়দের। দরজার সামনে লোহার গেট। বন্ধ। ভিতরে একটি লাল রঙের পর্দা। বাঁ দিকে সিমেন্টের স্ল্যাবে কয়েকটি জুতো রাখা। তবে বাড়ির সামনে মানুষজনের কোনও আনাগোনা নেই। থমথমে গোটা চত্বর। প্রতিবেশীদের একাংশ জানান, সঞ্জয়ের মায়ের মানসিক অবস্থা ঠিক নেই। সকালে কয়েক জন তাঁকে সমবেদনা জানাতে বাড়িতে গেলেও তিনি চিৎকার করে ভিতরে ঢুকে যান। প্রতিবেশীদের এক জনের কথায়, “বহু দিন ধরেই সঞ্জয়ের মা মানসিক ভাবে সুস্থ নন। ছেলের এই ধরনের কাজ তাঁকে আরও অসুস্থ করে তুলেছে।”

    কেমন লোক ছিলেন সঞ্জয়? প্রশ্নের উত্তরে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, “যতটা খারাপ ভাবা হচ্ছে, ততটাও নয়। আবার অনেকে যেমন ভাল ভাবছেন, ততটাও ভালও নয়।” এমন কাজ সঞ্জয় করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন? খানিক সাবধানী হয়ে ওই প্রতিবেশী বলেন, “দেখুন, যে সময়ে ঘটনা ঘটে, তখন এক জন কেমন আচরণ করবেন, তা পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।” আর এক প্রতিবেশী আবার মনে করেন সঞ্জয়কে ‘ফাঁসানো হয়েছে’। তাঁর কথায়, “আমরা ছোটবেলা থেকে ওঁর পরিবারকে দেখছি। মা পুজো নিয়ে থাকেন। তিন বোন। কখনও কারও সঙ্গে অসভ্যতা করতে দেখিনি। সঞ্জয়কে ফাঁসানো হচ্ছে।”

    তবে প্রতিবেশীদের প্রায় সকলেই একমত যে, খুন-ধর্ষণের ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত। কিন্তু তাঁরা ধরা পড়ছেন না বলে আক্ষেপ করেন তাঁরা। সঞ্জয়ের বাড়ির গলির শেষ প্রান্তে তাঁর এক বোনের বাড়ি। জামাইবাবু এই সংক্রান্ত বিষয়ে মুখই খুলতে চাইলেন না। বললেন, “বহু দিন ওদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বাকি দুই বোনকে কোথায় কী ভাবে বিয়ে দিয়েছে, সেই খবরও রাখিনি। আমার মা সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত আছি। আজ আমায় রেহাই দিন।”

    প্রসঙ্গত, আরজি করের সেমিনার হল থেকে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরের দিনই সঞ্জয়কে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তার পর সিবিআই এই মামলার তদন্তভার নিলে তাদের হাতে সঞ্জয়কে তুলে দেওয়া হয়। তদন্তের পর সিবিআই যে চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে, তাতে সঞ্জয়কেই একমাত্র অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়। ঘটনার দিন হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয়কে দেখা গিয়েছিল। শনিবার শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস এই মামলায় সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)