• আমৃত্যু কারাদণ্ড, আরজি কর কাণ্ডে সঞ্জয়ের সাজা ঘোষণা শিয়ালদহ আদালতের
    এই সময় | ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল শনিবার। সোমবার (২০ জানুয়ারি) আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাবাস দিলেন শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। এ দিন বিচারক জানান, সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬, ১০৩(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তা বিরল থেকে বিরলতম নয়। সঞ্জয়কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশও দেয় আদালত। রাজ্য নির্যাতিতার পরিবারকে সবমিলিয়ে মোট ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে, এই নির্দেশও দিয়েছে আদালত। যদিও নির্যাতিতার বাবা জানান, তিনি ক্ষতিপূরণ চান না। সেই সময়ে বিচারক বলেন, ‘এই মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ অর্থ দিয়ে করা যায় তা আমি মনে করি না। তবে কর্তব্যরত মহিলাদের রক্ষা করা রাজ্যের দায়িত্ব। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই নিয়ম।’

    এ দিন সঞ্জয়কে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেন বিচারক। হাতজোড় করে কাঠগড়ায় ওঠে সে। বিচারক সঞ্জয়কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত।’ এরপরেই সঞ্জয়কে বলার সুযোগ দেন বিচারক। সঞ্জয় বলে, ‘আমি ধর্ষণ করিনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি যদি এ কাজ করতাম, সেক্ষেত্রে আমার গলায় থাকা রুদ্রাক্ষের মালা নষ্ট হতো না? আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার উপরে অত্যাচার করেছে। প্রথমে আমাকে কিছু বলতেই দেওয়া হয়নি। যার যা ইচ্ছে, সেই রকম করছে।’

    বিচারক বলেন, ‘আপনাকে ৩ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম। যা প্রমাণ এসেছে, তা আপনার থেকে ভালো কেউ জানে না। আমি প্রমাণের উপর নির্ভর করে বিচার করতে পারি। আপনি ৩ ঘণ্টা যা বলেছেন, তার রেকর্ড রয়েছে। আপনি নির্দোষ, তা আগেও বলেছেন।’ বিচারক আরও প্রশ্ন করেন, ‘আপনার বাড়িতে কে আছেন? কেউ যোগাযোগ করে?’

    সঞ্জয় জানায়, তার মা আছে। সিবিআইয়ের আইনজীবী সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেন আদালতে। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা বিরল থেকে বিরলতম। গোটা সমাজ, দেশবাসী এই মামলার দিকে তাকিয়ে।’ যদিও এই ঘটনাকে আদৌ বিরলতম ঘটনা বলা যায় কি না, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন সঞ্জয়ের আইনজীবী। মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে বিকল্প কোনও সাজা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি।

    গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ উঠেছিল, ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে তাঁকে। প্রথমে এই ঘটনার তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। ১০ অগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই সময়ে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার পদে কর্মরত সঞ্জয় রায়কে। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্ত ভার যায় সিবিআই-এর হাতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা হেফাজতে নেয় সঞ্জয়কে। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবীও সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজার দাবি করেন।

    গত ১১ নভেম্বর শিয়ালদহ কোর্টে শুরু হয়েছিল ধর্ষণ ও খুনের বিচার। ১২ নভেম্বর আরজি কর মামলার ইন ক্যামেরা ট্রায়াল শুরু হয়। গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা আদালত এই ঘটনায় সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণ জনিত আঘাতের কারণে মৃত্যু), ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয় সে। সোমবার সঞ্জয়ের কী শাস্তি হয় সেই দিকে তাকিয়েছিল গোটা দেশ।

    উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডে সমাজের সব স্তরের মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ করেছিলেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের উপর হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতির কথা ফের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। দোষীদের ফাঁসির দাবি করেছিলেন তিনি। সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার আগে ডুমুরজলা হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী আবার জানান, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, তিনি তাই চান।

    আইন অনুযায়ী, সঞ্জয় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। যদিও আইনি লড়াইয়ে তাকে সাহায্য করবেন না তার মা এবং বোন, সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন তাঁরা।

  • Link to this news (এই সময়)