এই সময়: পূর্বরেলের শিয়ালদহ–ডানকুনি শাখায় বালি ব্রিজ ও বালি হল্ট স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশে পুরোনো লোহার জীর্ণ গার্ডারগুলি পাল্টাতে ১০০ ঘণ্টার জন্য ট্রেন বন্ধ হতে চলেছে ২৩ জানুয়ারি ভোর ৪টে থেকে ২৭ জানুয়ারি ভোর ৪টে পর্যন্ত। ওই চার দিন হাজার হাজার নিত্যযাত্রীরা কী ভাবে গন্তব্যে পৌঁছবেন, তা নিয়েই দুর্ভাবনা বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অনেকেই হাওড়া হয়ে যাতায়াতের কথা ভাবছেন।
মূলত রেলের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে কলকাতার সংযোগের জন্য ১৯৩১ সালে তৈরি হয় ‘উইলিংডন ব্রিজ’ নামে পরিচিত এই সেতু। শিয়ালদহ থেকে গঙ্গার ওপর দিয়ে ইস্পাতের সেতুর এই রেল ব্রিজের দু’পাশ দিয়ে অবশ্য সড়ক সেতুও রয়েছে। বালি ব্রিজ পেরিয়ে রয়েছে এক সময়ে ‘সিসিআর লাইন’ বলে পরিচিত এই শিয়ালদহ-ডানকুনি রুটের বালিঘাট স্টেশন।
স্টেশনটি আশপাশের সমতল ভূমির থেকে অনেকটা উঁচুতে। বালিঘাট স্টেশন পেরিয়ে বালি হল্টের মধ্যে এই রেলপথের নীচে অনেকগুলি রাস্তা রয়েছে। রাস্তার ওপর মজবুত ইটের দেওয়ালের ওপর লোহার গার্ডার দিয়ে তার ওপর লাইন বসানো হয়েছিল। সেই লোহার গার্ডারগুলির ক্ষমতা কমে যাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে লোহার গার্ডারের নীচের অংশ দিয়ে সিমেন্টের অতিরিক্ত মজবুত ঢালাই গার্ডার নির্মাণ করা হয়। এখন সেই গার্ডারগুলির ওপর নতুন করে রেলের স্লিপার ও ট্র্যাক বসানোর জন্য জোরদার কর্মযজ্ঞ চলছে ওই অংশে।
পূর্বরেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তত্ত্বাবধানে চূড়ান্ত পর্বের এই কাজের জন্য শিয়ালদহ ডিভিশনের পক্ষ থেকে এই অংশে ১০০ ঘন্টার পাওয়ার ব্লক করা হবে ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর ফলে একদিকে যেমন শিয়ালদহ থেকে ছাড়া বহু দূরপাল্লার ট্রেনকে অন্য রুট দিয়ে চালানো হবে, তেমনই কিছু দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। সঙ্গে শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখায় সমস্ত লোকাল ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে।
প্রতিদিন ২২ জোড়া লোকাল ট্রেন বাতিলের ফলে নিত্যযাত্রীদের একটি বড় অংশ খুবই অসুবিধায় পড়বেন। হুগলির বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ যাঁরা সরাসরি কলকাতায় আসতে চান, তাঁরা ডানকুনি থেকে শিয়ালদহ লোকাল ধরতে অভ্যস্ত। এ ছাড়া দু’জোড়া বারুইপাড়া লোকালও ডানকুনি হয়ে শিয়ালদহে ঢোকে। ডানকুনির পর হাওড়ার বালির রাজচন্দ্রপুর, বালি হল্ট, বালিঘাট স্টেশন থেকেও প্রচুর যাত্রী ডানকুনি লোকালে শিয়ালদহ যেতে অভ্যস্ত। তাঁদের প্রবল সমসস্যা হতে পারে।
এমনিতেই বালি হল্ট স্টেশন সংলগ্ন রাস্তা, যেটি জাতীয় সড়কের সঙ্গে বালি ব্রিজের সংযোগ ঘটিয়েছে, সেই রাস্তায় বালি হল্ট স্টপেজে দিনের অধিকাংশ সময় প্রবল যানজট ও যাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকে। বালি হল্ট হয়ে বেশ কিছু কলকাতাগামী বাসরুট চালু থাকলেও সেগুলিতে আগে থেকেই প্রবল ভিড় হয়। রেলের পরিকাঠামোগত কাজের সুবিধার জন্য ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি বালি ব্রিজের একপাশের রাস্তাও বন্ধ থাকবে। চারদিন তা বন্ধ রাখা হবে। ফলে বালি ব্রিজের এক দিক দিয়েই সব গাড়ি চলাচল করলে ওই রাস্তাতেও যানজটের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
এ দিন বালিঘাট স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা নিউটাউনের বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত যুবক সায়ন দাশগুপ্ত বলেন, ‘পরিকাঠামোর উন্নতি তো করতেই হবে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, সেটাও ঠিক করার প্রয়োজন ছিল। প্রতিদিন বালিঘাট থেকে ট্রেনে যাতায়াত করি। শুনছি, বাস রাস্তাও বন্ধ থাকবে। কী ভাবে যাব, তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।’ আর এক যাত্রী শর্মিষ্ঠা ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘নিউটাউনে হস্তশিল্প মেলায় স্টল দিয়েছি। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে। এই ক’দিন কী ভাবে যাতায়াত করব, বুঝতে পারছি না।’