শনিবার থেকেই আরজি কর কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের শাস্তি নিয়ে টানটান উত্তেজনা ছিল। অবশেষে সোমবার সেই উত্তেজনার অবসান হল। দোষী সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করলেন শিয়ালদা আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা প্রদানের নির্দেশ দিলেন বিচারক। যদিও আদালতের এই রায়ে একেবারেই সন্তুষ্ট নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার এই রায়দানের পর মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, 'আমি বিচারের রায় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। পুরো ডিটেইলস আমি জানি না। আইনজীবীরা জানেন। আমাদের কাছ থেকে কেসটা ইচ্ছেকরে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের হাতে থাকলে অনেক আগেই ফাঁসির অর্ডার করিয়ে নিতাম। আমরা তো বলেছিলাম আমরা না পারলে সিবিআইকে কেসটা দিন আপত্তি নেই। আমরা চাই বিচার হোক।' তিনি যে সন্তুষ্ট নন, তাও স্পষ্ট করে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। জানি না কী ভাবে লড়াই করেছেন, কী যুক্তি, সুতরাং ডিটেলস জানি না।' সিবিআই তদন্তে গাফিলতি রয়েছে কি না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি মমতা।
এদিন সিবিআইয়ের আইনজীবী এটিকে 'বিরলের মধ্যে বিরলতম' আখ্যা দিয়ে সর্বোচ্চ সাজা, অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেছিল। কিন্তু বিচারক সাজা ঘোষণার সময় জানান, এটি 'বিরলের মধ্যে বিরলতম' ঘটনা নয়। সোমবার আদালতের পক্ষ থেকে নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ্য সরকারকে। এরপরই বিচারককে নির্যাতিতার মা-বাবা জানান যে তাঁরা বিচার চান, ক্ষতিপূরণ নয়। সোমবার সকাল ১০.৩৬ নাগাদ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে বের করে শিয়ালদা আদালতে আনা হয় সঞ্জয় রায়কে। আদালতের আশেপাশের এলাকায় ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। পূর্ব নির্ধারিত সময়, দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ সঞ্জয় রায়কে কোর্ট লকআপ থেকে এজলাসে আনার নির্দেশ দেন বিচারক। এরপর প্রথমে সঞ্জয়ের বক্তব্য, অর্থাৎ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন বিচারক। ফের নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে সঞ্জয় রায়।
গত ১৮ জানুয়ারি, শনিবার সঞ্জয় রায়কে আরজি কর খুন-ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে শিয়ালদা আদালত। তাকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩টি ধারায় দোষী সব্যস্ত করে আদালত। প্রসঙ্গত, গত ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় গোটা দেশ তোলপাড় হয়। তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। পরে, ১৩ অগাস্ট আরজি কর কেসের তদন্তভার যায় সিবিআই-এর হাতে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত চালিয়ে সঞ্জয় রায়কেই ধর্ষণ-খুনে ‘একমাত্র অভিযুক্ত’ হিসাবে উল্লেখ করে চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। আর আজ তার সাজা ঘোষণা করল শিয়ালদা আদালত।