নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হল না ফাঁসির সাজা! ১৬৪ দিনের মাথায় আর জি কর কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়কে আজীবন কারবাসের সাজা শোনাল শিয়ালদহ আদালত। গত শনিবারই সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এরপর আজ, সোমবার দুপুর ২টো ৪৫ মিনিটে বিচারক অনির্বাণ দাস ২১০ নম্বর কোর্টরুমে এই সাজা ঘোষণা করেন। আজীবন কারবাসের পাশাপাশি দোষীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। জরিমানার টাকা না দিলে পাঁচ মাস অতিরিক্ত কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন বিচারক বলেন, ঘটনাটি আমার কাছে বিরলতম মনে হয়নি। সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ দেখেই আদালত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে, মৃতার পরিবারকে মোট ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। খুনের জন্য ১০ লক্ষ টাকা এবং ধর্ষণে ৭ লক্ষ টাকা। মৃতার পরিবারকে এই টাকা দেবে রাজ্য সরকার। এই রায়ের পরই তিলোত্তমার বাবা বলেন, ক্ষতিপূরণ চাই না। মেয়ের ন্যায় বিচার চাই। তাঁর উদ্দেশে বিচারক বলেন, আমি জানি আপনারা ক্ষতিপূরণ চান না। আপনারা মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আইনের বিধান অনুযায়ী এই ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছি। এরপর এই টাকা নিয়ে কী করবেন, তা সম্পূর্ণভাবেই আপনাদের বিষয়।
আজ, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ শুরু হয় এই মামলার শুনানি। শুরুতেই বিচারক কী কী সাজা হতে পারে, তা ফের স্মরণ করিয়ে দেন সঞ্জয়কে। আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। অন্যদিকে, সঞ্জয়ের আইনজীবী তদন্তের গাফিলতি তুলে ধরেন। দাবি করেন, এটি বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা নয়। এর স্বপক্ষে তিনি সুপ্রিম কোর্টের মোট চারটি নথি পেশ করেন। আবেদন করেন, ফাঁসির সাজার পরিবর্তে সঞ্জয়কে আজীবন কারবাস দেওয়া হোক।
গত বছর ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে শহর কলকাতা সহ গোটা দেশই উত্তাল হয়ে ওঠে। ঘটনার তদন্ত নেমে কলকাতা পুলিস গ্রেপ্তার করে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে। পরে হাইকোটের নির্দেশে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে সিবিআই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পেশ করা হয় চার্জশিট। শিয়ালদহ কোর্টের রুদ্ধ এজলাসে চলে শুনানি। সাক্ষ্য দেন মোট ৫০জন। সিবিআইয়ের কৌঁসুলি পার্থসারথি দত্ত ধৃতের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানান আদালতে। সঞ্জয়ের তরফে লিগ্যাল এইড থেকে নিযুক্ত আইনজীবী তদন্তে গাফিলতির কিছু বিষয় তুলে ধরেন। সওয়াল শেষ হয় গত ৯ জানুয়ারি। এরপর ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয় আজ, সোমবার রায় ঘোষণা করা হবে।