সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আদালতে বসে কেঁদে ফেলেছিলেন। জোড় হাত করে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাসকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। মেয়ের নৃশংস মৃত্যুর বিচারের লড়াইতে একধাপ এগোলেন বলে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। ভেবেছিলেন দোষী সিভিক ভলান্টিয়ারকে ফাঁসির সাজা শোনাবেন বিচারক। সোমবার প্রথমার্ধের শুনানি পর্যন্ত আশায় বুক বেঁধেছিলেন সন্তানহারারা। সাজা ঘোষণার পর আরও একবার মন ভাঙল আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মায়ের। সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ে হতাশ তাঁরা।
তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস মৃত্যুর ১৬৪ দিনের মাথায় শিয়ালদহ আদালতের বিচারক সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের কথা শোনান। রাজ্য়কে আদালতের নির্দেশ, নির্যাতিতার বাবা-মাকে ১৭ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করতে হবে। এই রায় শুনে ডুকরে কাঁদতে থাকেন নির্যাতিতার বাবা-মা। বিচারককে তাঁরা প্রশ্ন করেন, “আর্থিক সাহায্য নিয়ে কী করব? টাকা আমাদের লাগবে না। আমরা মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার চাইছি।” বিচারক বলেন, “আর্থিক সাহায্য নিয়ে কী করবেন, তা আপনাদের বিষয়। মৃত্যুর ক্ষতি টাকা দিয়ে মেটাচ্ছি মনে করবেন না। আপনাদের আর্থিক সাহায্য করা রাজ্যের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।” এরপর সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নির্যাতিতার বাবা। তাঁর মতে, “সঞ্জয়কে ঠিকমতো জেরা হয়েছে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। সিবিআই প্রমাণই করতে পারল না বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। তাই আদালত এই সাজা দিয়েছে সঞ্জয়ের। তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।” তবে এই প্রথমবার নয়, এর আগেও একাধিকবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ আগস্ট, নাইট শিফট ছিল আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের। ওই রাতেই শেষবার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। পরদিন সকালে বাড়িতে ফোন যায়। জানানো হয় দুঃসংবাদ। তড়িঘড়ি সোদপুরের বাড়ি থেকে সোজা আর জি করের উদ্দেশে রওনা দেন নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন। তারপরই তাঁরা জানতে পারেন, হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তাঁর মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়। তার পরদিনই গ্রেপ্তার হয় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। মেয়ের মৃত্যুর সুবিচারের দাবিতে বারবার পথে নেমে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছন নির্যাতিতার বাবা-মা। মেয়ের মৃত্যুর ১৬৪ দিনের মাথায় আদালতের সাজা ঘোষণায় ক্ষুব্ধ তিলোত্তমার পরিবারের লোকজন।