সোমবার ২০ জানুয়ারি, কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় মোড়া শিয়ালদহ আদালত চত্বর। কোর্ট রুমের মধ্যে ঢুকেছে আরজি করের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়। আদালত কক্ষের এক কোণায় বসে রায় শোনার অপেক্ষায় নির্যাতিতার বাবা-মা। কী ঘটল এ দিন শিয়ালদহ আদালতের ২১০ নম্বর রুমের ফার্স্ট এডিজে অনির্বাণ দাসের এজলাসে?
১২টা ৩০ মিনিট নাগাদ আদালতে উপস্থিত হন বিচারক। কোর্ট রুমের বাইরে যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা না-হয়, তার জন্য বারংবার সতর্ক করলেন বিচারক। আসামীকে আদালত কক্ষে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন তিনি। এজলাসে আনা হয় আরজি করের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একমাত্র দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয়কে। হাতজোড় করে কাঠগড়ায় উঠে দাঁড়াল সে।
বিচারক: আপনাকে বলেছিলাম, এই মামলায় যে চার্জ আনা হয়েছিল, তা প্রমাণিত। এ বার আপনি বলুন...
সঞ্জয় রায়: আমি ধর্ষণ করিনি। আমি ধর্ষণ করলে আমার গলায় থাকা রুদ্রাক্ষের মালা নষ্ট হতো না? আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার উপরে অত্যাচার করা হয়েছে। প্রথমে আমাকে কিছু বলতে দেয়নি।
বিচারক: আপনাকে ৩ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম। যা প্রমাণ এসেছে, তা আপনার থেকে ভালো কেউ জানে না। আমি প্রমাণের উপর বিচার করতে পারি। আপনি ৩ ঘণ্টা যা বলেছেন, তার রেকর্ড রয়েছে। আপনি নির্দোষ, আগেও বলেছেন। আপনার বাড়িতে কে আছেন? কেউ যোগাযোগ করে?
সঞ্জয় রায়: মা আছে। যোগাযোগ নেই।
বিচারক: মামলা চলাকালীন যোগাযোগ করেননি?
সঞ্জয় (বিচারকের এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে): আমি নির্দোষ। তা সত্ত্বেও আমাকে দোষী প্রমাণ করেছে।
সিবিআই-এর আইনজীবী: এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম। দোষী সঞ্জয়কে ফাঁসির সাজা দেওয়া হোক। যদি মৃত্যুদণ্ডের সাজা না-হয়, সে ক্ষেত্রে সমাজে অন্য কেউ নিজের সন্তানকে বাইরে পড়াতে পাঠাবেন না।
অভিযুক্ত সঞ্জয়ের আইনজীবী: পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণের প্রেক্ষিতে কি এই ঘটনাকে বিরলতম বলা যায়? (কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে, সেগুলির রেফারেন্স দেন সঞ্জয়ের আইনজীবী) অভিযুক্তের সর্বোচ্চ সাজার বিরোধিতা করছি। বিকল্প সাজার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করছি।
নির্যাতিতার আইনজীবী: সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ সাজার দাবি করছি।
সঞ্জয়ের আইনজীবী: তদন্ত শেষ হয়নি। পুরোটা শেষ হোক।
বিচারক: আপনি পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন।
(কিছুক্ষণ পরে বিচারক বলেন দুপুর ২টো ৪৫ মিনিটে সাজা ঘোষণা হবে)
২টো ৪৫ মিনিটে ফের বসল আদালত।
বিচারক (সঞ্জয় রায়ের উদ্দেশে): আপনাকে ৬৪, ৬৬, ১০৩(১) ধারায় (ভারতীয় ন্যায় সংহিতা) দোষী সাব্যস্ত করা হলো। সিবিআই মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে। সরি টু সে, কিন্তু এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়। আপনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলো। জরিমানা দেওয়া না-হলে আরও ৫ মাসের জেল। রাজ্য চিকিৎসকের পরিবারকে ‘কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু’-র ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লক্ষ এবং ধর্ষণের জন্য ৭ লক্ষ মোট ১৭ লক্ষ ক্ষতিপূরণ দেবে।
নির্যাতিতার বাবা: আমি ক্ষতিপূরণ চাই না। সুবিচার চেয়েছি শুধু।
বিচারক: কোনও অর্থ দিয়ে এই মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। কিন্তু এটা রাজ্যের (রাষ্ট্র) দায়িত্ব। আমাকে আইনের বাঁধনের মধ্যে থাকতে হবে।