• ‘জনগণের চাপের কাছে মাথানত’ করতে পারে না আদালত! সঞ্জয়ের সাজা নিয়ে বললেন বিচারক
    হিন্দুস্তান টাইমস | ২১ জানুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চাইছিলেন অধিকাংশ মানুষ। বিশেষত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি পকসো মামলায় আসামিদের ফাঁসির সাজা দেওয়া হওয়ায় অনেকেই আশা করেছিলেন যে সঞ্জয়কেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। যদিও শেষপর্যন্ত তাকে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা দিয়েছেন শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। তাঁর মতে, মানুষের ভাবাবেগকে দূরে সরিয়ে রেখে ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রেখে চলার দায়িত্ব আছে আদালতের। আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রেখে আদালতকে কাজ করতে হয় বলেও জানিয়েছেন বিচারক দাস।

    আরজি কর মামলার ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ের কপিতে শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক বলেছেন, ‘আদালতকে অবশ্যই জনগণের চাপ বা মানবিক আবেদনের কাছে মাথানত করার প্রলোভনকে প্রতিহত করতে হবে। বরং এমন একটা রায়দানের উপরে মনোনিবেশ করতে হবে, যা আইনি ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রাখে এবং ন্যায়বিচারের বৃহত্তর স্বার্থকে পূরণ করে।’

    অর্থাৎ তিনি যে মামলার রায়দান করছেন, তার দিকে যে পুরো দেশের মানুষ তাকিয়ে আছেন, তা ভালোভাবেই জানতেন শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক। আদালত চত্বরের বাইরে জড়ো হওয়া মানুষ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মানুষদেরও কণ্ঠস্বর জানতেন। তাঁরা কী চাইছেন, সেটাও ভালোভাবে যে জানতেন, সেটা রায়ের কপিতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন শিয়ালদা অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক।


    তারপরও যে সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন, সেটার কারণ ব্যাখ্যা করে বিচারক জানিয়েছেন, অপরাধের মাত্রা এবং ন্যায়বিচার, পুনর্বাসন এবং মানুষের মর্যাদা সংরক্ষণের নীতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে রায়দান করতে হয়। আর যাবতীয় পরিস্থিতি, সমাজে আরজি কর কাণ্ডের প্রভাব এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষের ভাবাবেগের বিবেচনা করে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিচ্ছেন।


    যদিও সঞ্জয়কে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া হওয়ায় অনেকেই উষ্মাপ্রকাশ করেছেন। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, আদালত কীভাবে আরজি করের ঘটনাকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ অপরাধ বলে চিহ্নিত করল না, সেটা ভেবেই ‘স্তম্ভিত’ হয়ে যাচ্ছেন। সেইসঙ্গে সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি জানিয়ে রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।


    তবে আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম 'মুখ' তথা সমাজকর্মী তুলিকা অধিকারী জানিয়েছেন, শিয়ালদা আদালতের রায়ে হতাশ নন। বিচারক অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে রায় দিয়েছেন। রায়ের একাধিক অংশে পুলিশের কাজের সমালোচনা করেছেন। ফলে আরজি কর মামলায় আরও একটা দিক খোলা রইল। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছে কারা, সেগুলিও সামনে আসার ক্ষেত্রে শিয়ালদা আদালতের রায় একটা ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)