উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্রছাত্রী কমেছে ১৯ হাজার, মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতেই কাজের সন্ধানে স্কুল ছাড়ছে ছাত্ররা, উদ্বেগ
বর্তমান | ২১ জানুয়ারি ২০২৫
অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর: মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরলেই পরিযায়ী শ্রমিকের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে অল্প বয়সি যুবকরা। কাজের খোঁজে তারা কেরল, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক সহ বিভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। শুধু কি তাই? সৌদি আরব, কাতারের মতো ভিন দেশেও কাজের সন্ধানে যাচ্ছে তারা। নদীয়া জেলায় প্রত্যন্ত এলাকায় ছাত্রদের পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। চলতি বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পার্থক্য সেইরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিস্তর ফারাক দেখা গিয়েছে এই দুই পরীক্ষার পরীক্ষার্থীর সংখ্যায়। মাধ্যমিকের তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার কম। যা বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়নি। দেখা যাচ্ছে, ছাত্রীদের থেকে ছাত্রদের মধ্যেই এই স্কুলছুটের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। অনুমান করা হচ্ছে, অল্প বয়সেই কর্মজীবন শুরু করার জন্যই বোর্ডের পরীক্ষায় ছাত্রদের সংখ্যা ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। নদীয়া জেলার শিক্ষাদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘এবছর ৪০ হাজার পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা একটু কম।’
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে ৫৯ হাজার ৬৩১ জন ছাত্র-ছাত্রী। যার মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ২৮ হাজার ৬৫৩ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৯৭৮ জন। অন্যদিকে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৪০ হাজার ১৮৬ জন। যার মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১৮ হাজার ২৬ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ২২ হাজার ১৬০ জন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিকের তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিকে ১৯ হাজার ৪৪৫ জন কম পড়ুয়া পরীক্ষা দেবে। ছাত্রের সংখ্যা কমেছে ১০ হাজার ৬২৭ জন। ছাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৮ হাজার ৮১৮ জন। অনেকেই মনে করছেন, স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ার কারণেই পরিসংখ্যায় তারতম্য দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাল্যবিবাহ সহ নানা কারণে ছাত্রীদের স্কুলছুট নিয়ে সর্বদাই আলোচনা হয়। অনুমান করা হচ্ছে, গতবছর নদীয়া জেলায় দু’হাজার ছাত্রী স্কুলছুট হয়েছে। তবে ছাত্রদের স্কুলছুটের বিষয়টি বরাবরই আলোচনায় আড়ালেই থাকে।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় এই বিরাট তারতম্য আগে দেখা যায়নি। ২০২৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ৬২৯। সেই বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ৮৭৪ জন। অর্থাৎ সেবছর মাধ্যমিকের তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৭৫৫ জন কম ছিল।
নদীয়া জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কার্তিক মণ্ডল বলেন, ‘আমরা ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটরিং কমিটি গঠন করেছি। স্কুলে গিয়ে আমরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছি। এমনিতেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ফারাক থাকে। কারণ অনেকেই মাধ্যমিকের পর কারিগরি শিক্ষার লাইনে চলে যায়।’
নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ১৫-১৬ বছরের যুবকদের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ার প্রবণতা বেশি। নিত্যদিন আমাদের কাছে এই ধরনের ঘটনা আসে। মাধ্যমিক দিয়েই দালালের মাধ্যমে বাইরে চলে যাচ্ছে তারা। আধারে বয়স পরিবর্তনের জন্য দালালকে মোটা টাকাও দিচ্ছে।’
শ্রমদপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, বছরখানেক আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সমীক্ষা করার সময় আমরা দেখেছিলাম যে, বাবার সঙ্গে অল্প বয়সি যুবকরাও বাইরে কাজে যাচ্ছে। আঠারো বছর না হওয়ায় তাদের নাম নথিভুক্ত করা হয়নি।