স্বামী নিরুদ্দেশ, ভাপা পিঠে বিক্রি করে স্বনির্ভর মিনতি
বর্তমান | ২১ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, ইটাহার: বাড়ির লক্ষ্মীর এ যেন এক হার না মানা জীবন সংগ্রামের কাহিনী। তিন সন্তানকে রেখে ১৫ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যান স্বামী। তারপর থেকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে। সেখানেও যে কম কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তা নয়। বর্তমানে দিনমজুরি ও ভাপা পিঠে বিক্রি করে জীবন নির্বাহ করছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহারের তেঁতুলতলার বাসিন্দা মিনতি রাজবংশী। বর্তমানে তাঁর ছেলেরা অনেকটাই বড় হয়েছে। দিনমজুরের কাজ করে তাদেরকে কিছুটা লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বড় ছেলে ভিনরাজ্যে কাজ করে। অন্য দুই ছেলে দিনমজুর। বাবার ভিটেয় টিনের এক কামরা ঘরে তাঁরা থাকেন।
২৫ বছর আগে চাঁচলে বিয়ে হয়েছিল মিনতিদেবীর। যখন ছোট ছেলের বয়স তিন মাস তখন হঠাৎ স্বামী নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর থেকেই শুরু কঠিন জীবন সংগ্রাম। বছরের অন্য সময় দিনমজুরের কাজ করলেও শীতে মিনতিদেবী ভাপা পিঠে বিক্রি করেন। ইটাহারের চৌরঙ্গী এলাকায় সড়কের ধারে বসে তিনি ভাপা পিঠে তৈরি করে বিক্রি করেন। বাড়ি থেকে ৩ কিমি দূরের ইটাহারে সকাল ৬টায় এসে রাত ৯টায় বাড়ি ফেরেন। দুপুরের বিরতিতে বাড়ি গিয়ে সংসার সামলে ও রান্না করে সকলকে খাইয়ে ফের কাজে ফেরেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বৃদ্ধা মায়ের ওষুধ কিনতেই চলে যায়। পিঠে বিক্রি করে যা আয় হয় তাতেই কোনওমতে সংসার চলে। মিনতি বলেন, কষ্ট করে তিন শতক জায়গা কিনেছি। কিন্তু সরকার থেকে এখনও ঘর পাইনি।
মিনতিকে দেখে গ্রামের ছয়-সাত জন মহিলা একই পেশা বেছে নিয়েছেন। সকলেই তাঁর কঠোর জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। ইটাহারের এক শিক্ষক অজয় চক্রবর্তী বলেন, তাঁদের স্বনির্ভর হওয়ার তাগিদ অন্য মহিলাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। - নিজস্ব চিত্র